Pages

বুধবার, ১৩ জুন, ২০১৮

অপরিচিতা ( সার সংক্ষেপ এইচ এস সি বাংলা ১ম পত্র ) কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ছোট গল্প

অপরিচিতা (সার সংক্ষেপ এইচ এস সি বাংলা ১ম পত্র)

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ছোট গল্প

গল্পটি একটি চমৎকার নৈতিক চরিত্র ও স্বভাবসিদ্ধ মানুষের জীবন প্রবাহ নিয়ে লেখা গল্প। 
গল্পটির মূল চরিত্রে তুলে ধরা হয়েছে অনুপম, কল্যাণী, অনুপমের মামা, অনুপমের বন্ধু হরিশ এবং বিনু দাদা
এই মাত্র কয়েকটি চরিত্র নিয়ে গল্পটি লেখা হয়েছে চলিত প্রাঞ্জল ভাষায় সহজ ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে ।
২৭ বছর বয়সের টগবগে যুবক অনুপম এম এ পাস করা একজন স্মার্ট যুবক। অনুপমের বাবা পূর্বে বলতে গেলে দরিদ্র পরিবারেরই একজন ছিলেন কিন্তু ওকালতি করে প্রচূর অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনে সক্ষম হয়। আর অনুপমের মা ছিলেন একটি গরীব পরিবারের মেয়ে। 

গল্পে অনুপমের বয়স ২৭ বছর হলে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে এবং অনুপমের মামার বয়স ৩৩ বছর। বিষয়টি পরিস্কার করা দরকার যে অনুপমের বয়স যদি ২৭ বছর হয় আর অনুপমের মামা যদি ৬ বছরের বড় হয় তাহলে ২৭+৬=৩৩ বছর হবার কথা। 
অনুপমের বাবা একজন উকিল হলেও এই পরিবারের সকল বিষয়াদির ক্ষেত্রে সকল সিদ্ধান্ত সমূহের ভার অনুপমের মামার উপরই থাকে অর্থাৎ অনুপমের মামাই হচ্ছে এ পরিবারটির আসল মোড়লের মত। অর্থাৎ সর্ব বিষয়ে জ্ঞান দাতা সিদ্ধান্তের রায় প্রদান করেন মামা। 
সিনেমাটিক এ গল্পটির মূল চরিত্র খুজতে গেলে স্পষ্ট বুঝা যায় যে এ পরিবারের পরিচালক হচ্ছেন অনুপমের মামা। 
অতএব, এম এ পাস অনুপমের বিবাহের কার্যটি সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা তার মামা। 
তার মামার পছন্দই গুরুত্বপূর্ণ আর মামার ইচ্ছে হলো একজন মেয়ে যে মেয়ে কখনো এ বাড়ীতে আসার পরে সব সময় মাথা উচু করে বড় গলায় কথা না বলেএবং মেয়ের বাবা ধনী না হলেও যৌতুকের টাকা যেনো ঠিকমত দিতে পারে এবং মেয়ে যেনো কোন দিনই যৌতুকের সূত্র ধরে কোন দাপট না দেখায়। 
অনুপমের বন্ধু হরিশ। এ হরিশ কানপুরে থেকে কাজ করে। সে ছুটিতে কোলকাতায় অনুপমের বাড়ীতে এসে বিভিন্ন রসালো কথার মালায় এম এ পাস অনুপমকে উতলা করে তুললো। 
অনুপমকে উত্তেজিত করার মত করে বলছে- মেয়ে খুজছো? একটি খাসা মেয়ে আছে। একটি টগবগে এম এ পাস ছেলে বিবাহের জন্য মেয়ে খুজছে আর ঠিক সে সময়ে যদি কোন বন্ধু এসে এমন খবর দেয় যে একটি খাসা মেয়ে আছে, তাহলে কার মন উতলা না হবে? 
অন্যদিকে অনুপমের মামা যে ধরনের মেয়ে খুজছিলো ঠিক তেমন মেয়ের সন্ধান পেলো যেনো। মেয়ের পরিবার পূর্বে অনেক ধনী ছিলো বর্তমানে আর্থিক দৈন্যতার কারনে গরীবই বলা চলে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে মান সন্মান রক্ষার্থেই লোক চক্ষুর আড়ালে দূরে গিয়ে বসবাস করছে। তাই মেয়েটির পরিবার এখন পশ্চিমে গিয়ে বসবাস করছে। 
সব কিছুই ঠিক ছিলো কিন্তু মেয়ের বয়স মাত্র ১৫, এ কথা শুনে তার মামার মন খারাপ হয়ে গেলো। তবে বয়স কোন বড় ধরনের সমস্যা নয় বলে এড়িয়ে গেলো এবং মেয়েকে আশীর্বাদ করার জন্য অনুপমের পিসতুতো ভাই অর্থাৎ ফুফাতো ভাই বিনু দাদাকে পাঠানো হলো । 
বিনু দাদা আশীর্বাদ করে ফিরে এসে মন্তব্য করে বললেন মেয়েতো নয়, খাটি সোনা বটে
বিনু দাদার কথা বলি। বিনু দাদা এমনি একজন ব্যক্তি যিনি সাধারনত আমরা যেভাবে সব কিছুকে সরাসরি মূল্যায়ণ করে বলে থাকি চমৎকার, বিন্দু দাদা সেটিকে বলবেন মন্দ নয় বা মোটামুটি। অর্থাৎ বিনু দাদার কথা ও গাম্ভীর্যপূর্ণ মতামতের প্রতি সকলেরই আস্থা রয়েছে। 
সূতরাং সে বিনুদা যখন এসে বলেছেন মন্দ নহে খাটি সোনা বটে” তখন শিক্ষিত অনুপম বুঝে নিয়েছে যে মেয়েটি কত সুন্দর হতে পারে। 
মনে মনে অনুপম খুব খুশি যে এমন একটি সুন্দরী রমণী তার জীবন সঙ্গী হতে চলেছে। 
এবারে কল্যাণীর কথায় যাই কল্যানী হচ্ছে এ গল্পের নায়িকা। আর প্রায় চল্লিশ বছর বয়স্ক শম্ভূনাথ বাবুর মেয়ে হচ্ছে কল্যাণী ।  
সব কথাবার্তা আলোচনার মাধ্যমে বিবাহের দিন ধার্য হলো এবং বরযাত্রী গেলেন কল্যাণীদের বাড়িতে। প্রথমেই বাড়ীতে প্রবেশ করে অনুপমের মামা খুশি হতে পারলেন না কারন কল্যাণীর বাবা তাদের অভ্যর্থনা জানাতে অর্থাৎ বরযাত্রীদের রিসিভ করতে আসেননি। 
 অন্যদিকে বিবাহ অনুষ্ঠানের সাজ গোজও অনুপমের মামার পছন্দ হয়নি। 
সম্ভনাথ বাবুর এক উকিল বন্ধু বরযাত্রীকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে অত্যন্ত শালীনতা ও ভদ্রতার সাথে যে কারনে মামা বিষয়টি নিয়ে বেশী বারাবারি করেননি।  তা না হলে হয়তো অঘটন ঘটেই যেতো। 

অনুপমের মামা খুব নীচু মনের মানুষ এ কথা প্রমান করে এ কারনে যে সে ভেবেছিলো শম্ভুনাথ বাবু হয়তো গহনা লেন দেনের ক্ষেত্রে ঠকাবে আর সে কারনেই অনুপমের মামা তার বাসার শেকড়াকে নিয়ে এসেছেন, কি কি গহনা অর্থাৎ সোনা দানা ঠিক মত দিয়েছে কিনা বা এ সোনা আসল কিনা ইত্যাদি,। অনুপমের মামা এ সব করে নিজেকে খুব নীচু মনের মানুষের পরিচয় দিয়েছেন অপরপক্ষে শম্ভুনাথ বাবু একজন অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন  উচুমনের শক্ত একজন মানুষ যার মধ্যে আত্ম সন্মানবোধ প্রচন্ডভাবে কাজ করে। গরীব হতে পারেন অর্থহীন হতে পারেন কিন্তু ব্যক্তিত্বকে কখনো হেয় প্রতিপন্ন করেননি। 
কিছু লোক আছে না, যাদের আমরা বাচাল বলে থাকি, অনুপমের মামা হচ্ছেন সে প্রকৃতির একজন লোক। সারাক্ষন কেবল বগ বগ করতেই থাকে আর শম্ভুনাথ বাবু হচ্ছেন কম কথা বলেন, তবে যা’বলেন তা মূল্যবান এবং কথা রাখার চেস্টা করেন কঠিন ভাবে। 

সম্ভুনাথ বাবু গহণাগুলো নিয়ে এলেন এবং অনুপম কে ডাকলেন। এ কারনে ডাকলেন যে অনুপম তো একটি এম এ পাস অর্থাৎ শিক্ষিত ছেলে। সে দেখুক যে তার মামা কত হীন মনমানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি। যিনি বরকে দেয়া গহণা নকল কিনা বা কম কিনা অর্থাৎ মেয়ের বাপ হয়ে আমি ঠকিয়েছি কিনা ইত্যাদি। 
শম্ভুনাথ বাবু মূলতঃ দেখতে চেয়েছিলেন যে এম এ পাস করা বর তার মামার অতিরঞ্জিত কাজের জন্য আদৌ প্রতিবাদ করে কিনা? সেতো শিক্ষিত ছেলে, তার সে শিক্ষার প্রমান এখানেই পাওয়া যাবে এই ভেবে তিনি অনুপম কে ডাকলেন। যদি সে প্রতিবাদ করে তাহলেই তার মেয়েকে অনুপমের হাতে তুলে দেবেন আর যদি সে প্রতিবাদ না করে তাহলে মনে করবো সে শিক্ষিত নয় এবং শিক্ষিত হলেও কোন ব্যক্তিত্ববোধ নেই এবং সে তার মামার পদতলে বড় হওয়া ব্যক্তিত্বহীন ছেলে। 
শম্ভুনাথ বাবু অনুপমকে বললেন বাবা তোমার মামা সোনা দানা গহণা পাতি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছেন, তুমি কি কিছু বলবে? 
কথার উত্তর দিলেন অনুপমের মামা বললেন, সে কি বলবে, আমার যা কথা সেটাই চূড়ান্ত, সে কিছু বলবে না। 

আসলেই অনুপম কিছু বলল না। শম্ভুনাথ বাবু বুঝে নিলেন ছেলে এম এ পাস হলেও তার কোন নিজস্ব ব্যক্তিত্ব স্বকীয়তা সন্মান বোধ বলতে কিছু নেই, সে তার মামার পদদলে আশ্রয়গ্রহণকারী একটি ছেলে। 
পরীক্ষা শুরু হলো। দেখা গেলো সব স্বর্ণ গুলোই খাটি এবং কোথাও কোন গলদ নেই স্বর্ণগুলো এতই দামী যে এ সময় সাধারণত পাওয়া যায়না। 

 কিন্তু ছোট্ট একটি কানের দুল দেখা গেলো স্বর্ণের চেয়ে ভিন্ন এক ধরনের স্বর্ণ এবং পরে জানা গেলো ঐ দুলটিই অনুপমের মামা কল্যাণীকে দেখতে এসে আশীর্বাদ করার সময় দিয়েছিলো এবং এটাও প্রমানিত হলো যে ওটা খাটি সোনা নয়, নকল। 

শম্ভুনাথ বাবু তখন বললেন এটা আপনাদের নিকটই রেখে দেন। এরপরে অনুপমের বাবা পাশ কাটিয়ে প্রসঙ্গ বদলে দিয়ে বললেন চলুন বিয়ের কাজ শুরু করি। শ্মভুনাথ বাবু বললেন না, বিয়ের আগে আপনারা খাওয়া দাওয়া করেন। অর্থাৎ অনুপমের মামা আসলে বুঝতে পারেন নি যে শম্ভুনাথ বাবু কি কারনে আগে খাবারের কথা বললেন এবং ঘটনাটি কি ঘটতে যাচ্ছে। মামা একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলেন ব্যাপার কি বিয়ে আগেই খাওয়া দাওয়া, এ কেমন কথা? অনুপমের মামা বললেন ঠিক আছে আমরা তাহলে খাই, অনুপম সবাই গিয়ে বসুক। সম্ভুনাথ বাবু বললেন না অনুপমও আমাদের সাথেই খাওয়া দাওয়া করুক। খাওয়া দাওয়া শেষে অনুপমের মামাকে বললেন এখন তাহলে আপনারা সবাই যেতে পারেন। অনুপমের মামা একটু অবাক হয়ে গেলেন, কি ব্যাপার বিয়ে না হবার আগেই আমাদের যেতে বলছেন, বোধ হয় ঠাট্টা করছেন, তাই জিজ্ঞেস করলেন আপনি কি ঠাট্টা করছেন নাকি ? 

ঠাট্টা করবো কেন? যে ব্যক্তি ভাবতে পারেন যে আমি আমার মেয়ের বিয়েতে বাবা হয়ে মেয়ের স্বর্ণ চুরি করতে পারি, এত নীচু মনের অর্থাৎ এত হীন মনোবৃত্তি সম্পন্ন মানুষের ঘরে তো আমার মেয়ে বিয়ে দিতে পারিনা। 

শেষ অবধি অনুপমের মামা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে বিয়ের আসর থেকে চলে আসলেন। কিন্তু আসার সময় অনেক জিনিষ পত্র ভেঙ্গে চুরমার করে একেবারে লংকা কান্ড ঘটিয়ে চলে এলেন। 
অন্তত যদি না খেয়ে চলে আসতে হতো, কোন কথা ছিল না কিন্তু সম্ভুনাথ বাবুর বিচক্ষনতা আতীথেয়তার নিকট মাথা হেট হয়ে গেলো অর্থাৎ সম্ভুনাথ বাবু ভদ্রতার সাথে মেহমানদের খাওয়া দাওয়া করার পরে অত্যন্ত বিনয়ের সাথেই জানিয়ে দিলেন যে মেয়ে দেবেনা। 
অনুপমের মামা রেগে বেগে আগুন। তিনি ক্ষীপ্ত হয়ে বললেন আমি দেখে নেবো এই মেয়ে কিভাবে বিয়ে দেন এবং কোথায় বিয়ে দেন। 
এর পরে প্রায় বছর গড়িয়ে গেলো। অনুপমের বাড়ীতে আর বিবাহ সংক্রান্ত কোন আলাপ আলোচনা ওঠেনি। কারন বিয়ে করতে গিয়ে মেয়ের বাড়ী থেকে অপমানিত হয়ে ফিরে আসার গ্লানি তাদের মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। 
ও দিকে কল্যানীর নাকি আবারও বিয়ে ঠিক হয়েছে এবং কল্যাণী নাকি জানিয়ে দিয়েছে, সে আর বিয়ে করবেনা ।
একদিন অনুপম তার মাকে নিয়ে তীর্থ ভ্রমনে যাবার উদ্দেশ্যে রেল গাড়ী যোগে রওয়ানা দিয়েছে। এমন সময় হঠাত একটি স্টেশনে রেল গাড়ী থামার পরে অনুপমের ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং সে শুনতে পেল একটি মিস্টি কন্ঠের মেয়ে কাউকে বলছে জলদি চলে আয় এ গাড়ীতে যায়গা আছে। 
অনুপম অভিভূত হলো। বিমূগ্ধ শ্রোতার মত মেয়ের কন্ঠের স্বরধ্বনি অনুপমের হৃদয়ে বাজতে থাকলো। মনে হলো মেয়েটির কন্ঠে যেনো সঙ্গীতের সুর লহরী ধ্বনিত হচ্ছে, অনুপম যেনো সুমধুর কন্ঠে গান শুনতেছে। 

অনুপম রেলগাড়ীর জানালা খুলে মেয়েটিকে দেখার চেস্টা করলো কিন্তু দেখতে পেলোনা কারন স্টেশনটিতে অন্ধকার ছিল। ট্রেন ছেড়ে দিলও কিন্তু অনুপমের আর ঘুম হলোনা, সে কেবলই সে মেয়েটির কথা ভাবছে, যদি এ ট্রেন থেকে মেয়েটি কোথাও নেমে পরে অথবা যদি দেখা না পায়। 
পরের দিন একটি স্টেশনে নেমে অনুপমকে গাড়ী করতে হবে।
স্টেশনে নেমে গাড়ী বদল করা খুব কঠীন। সব গাড়ীতেই প্রচন্ড ভীড় যে কারনে আর ১ম শ্রেণীর গাড়ী ধরা হলোনা, শেষ মেষ দ্বিতীয় শ্রেনীর গাড়ীতেই মাকে নিয়ে যেতে হবে অনুপমের। ২য় শ্রেণীর গাড়ীতেও এত ভীড় যে অনুপম ভেবে উঠতে পারছিলো না যে কি করবে। 
হঠাত অনুপম দেখলো একটি মেয়ে তার মাকে ডাকছে। বলছে আপনারা আমার গাড়ীতে আসুন, এখানে অনেক যায়গা আছে।  
অনুপম অবাক হয়ে গেলো- এইতো সেই কণ্ঠ যে কণ্ঠ সে কাল অন্ধকারে রাতে শুনেছিলো। 
অনুপম আর দেরী না করে তার মাকে নিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর ঐ মেয়েটির গাড়ীতে ওঠার জন্য রওয়ানা দিলও কিন্তু গাড়ীতে ওঠার আগে হঠাত অনুপমের মনে পড়লো যে তার ফটো তুলবার ক্যামেরাটি সে ফেলে এসেছে আগের গাড়ীতে। 

অনুপম আর তার মা মেয়েটিকে দেখে অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো এত সুন্দর একটি মেয়ে কিভাবে গাড়ী চালক হতে পারে? তবে জিজ্ঞেস করার মত সাহস পাচ্ছিলো না। 
ভাবতে ভাবতে ইতোমধ্যে গাড়ী কানপুরে এসে গেছে। 
অনুপমের মা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো তোমার নাম কি মা? 
মেয়েটি বলল আমার নাম কল্যাণী । অনুপমের মা অবাক হয়ে গেলো কারন এক বছর পূর্বে তার ছেলের সাথে যে মেয়েটির বিয়ের কথা ধার্য হয়েছিলো সে মেয়েটির নামও কল্যানী ছিল। তবে যেহেতু অনুপমের মা মেয়েটিকে সরাসরি দেখেনি তাই কল্যাণীর সামনে থেকে দেখা সত্বেও চিনতে পারছে না এই সে কল্যাণী। 
জিজ্ঞেস করলো তোমার বাবা? 
কল্যাণী জানালো তার বাবা স্থানীয় একজন ডাক্তার তার নাম সম্ভুনাথ সেন। অনুপম ও তার মা চলে গেলো। 
এর পরে অবশ্য অনুপম তার লোভী মামার নিষেধ অমান্য করে কানপুরে এসে সম্ভুনাথ বাবুর সাথে দেখা করে বিনয়ের সাথে বিবাহের কথা পুন উন্থাপন করে ছিলো কিন্তু কল্যাণী রাজী হলো না। সে স্পষ্ট জানিয়ে দিলও আমি বিয়ে করবো না। 
অনুপম জিজ্ঞেস করেছিল কেন? 
কল্যাণী জানালো মাতৃ আজ্ঞা। 

ভালো লাগলে অথবা এ গল্পটি কোন ছাত্রছাত্রীদের সার সংক্ষেপ হিসেবে কাজে লাগলে খুশি হবো। সাবস্ক্রাইব ও ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে সংশোধনের জন্য মন্তব্য করলে অবশ্যই সংশোধন করবো। 
অনেক অনেক ধন্যবাদ দেখার জন্য।  

শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

বিলাসী ছোটগল্প শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এইচ এস সি বাংলা ১ম পত্র

বিলাসী 

শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটগল্পের সারাংশ ও বিশদ আলোচনা


 

শিক্ষার্থী বন্ধুরা

যাদের আসন্ন পরীক্ষায় বিলাসী ছোটগল্পটি সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তরের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাদের জন্য আমার এ সার সংক্ষেপ।
অনেক ছাত্র ছাত্রী রয়েছে যারা গল্প পাঠ করে সারাংশ লেখার ক্ষেত্রে হিমশিম খায় অথবা মনে রাখতে পারেনা। তারা যদি অডিও শোনে অনেক ক্ষেত্রে কারো মূখে শোনা গল্পের সারাংশ মোটামুটিভাবে আপনা আপনিতেই তৈরী হয়ে যায়।
আবার কেউ কেউ আছে যারা বইয়ের সারাংশ মূখস্ত করে। তবে নিজের স্বরণ শক্তি একটু দুর্বল হলে অনেকেই মূখস্ত করার অভ্যেস করে থাকে, যাতে পরীক্ষায় অধিক নং পাবার সম্ভাবনা একান্তই কম থাকে। সে কারনে দেখা গিয়েছে মূখস্ত বিদ্যার চেয়ে কোন গল্প নিজে পাঠ করে গল্পের গোটা বিষয়টি সম্পর্কে সম্মক ধারনা পোষণ করে নিজের থেকে সারাংশ লিখলে পরীক্ষায় অধিক নং পাওয়া যায়।
চলো বন্ধুরা আজ আমি তোমাদের যুগ শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী শরত চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিলাসী ছোটগল্পের সারাংশ এবং মর্ম সংক্ষেপে আলোচনা করবো।

যে কোন সময়ের সব চেয়ে জনপ্রিয় কথাশিল্পী বা উপন্যাসিকদের মধ্যে শরত বাবু এমন একজন লেখক ছিলেন যিনি জীবনের রুঢ় কঠিন বাস্তব সত্যকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন এবং বাংলার অবহেলিত লাঞ্ছিত বঞ্ছিত পল্লী সমাজের হত দরিদ্র্য মানুষগুলোর জীবনে প্রতিনিয়ত যে সকল প্রতিবন্ধকতা, সমস্যা ও অভিশপ্ত জীবন প্রবাহের স্রোতে সুখ সমৃদ্ধি মহা সাগরের অথৈ জলে ভেসে যাওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় রয়েছে, সে সকল অজো পাড়াগায়ের নিভৃত পল্লীর মানুষের জীবনের ছোট খাটো বা বৃহৎ কস্টের কথাগুলো তার লেখায় গল্পে উপন্যাসে প্রবন্ধে প্রকাশ করেছেন।

বাংলার অপরাজেয় কথা সাহিত্যিক শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটগল্প বিলাসী সে ধরনেরই একটি হৃদয় বিদারক কাহিনী বা ছোটগল্প।

যখন আমি ক্লাস ফাইভ কিংবা সিক্সে পড়তাম। আমার শিক্ষক আমার এক চাচাতো ভাই শরত বাবুর উপন্যাস পড়তেন আর আমাদের নিকট উদাহরণ স্বরুপ একটি একটি গল্পের মধ্য থেকে বিশেষ অংশ গুলো শুনিয়ে উপদেশ দিতেন।

কেবল আমার সে শিক্ষকই নয়, এপার বাংলা ওপার বাংলার এমন কোন শিক্ষিত পরিবার নেই যে পরিবারের কেউ শরত চন্দ্র, কবি গুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবি জসীম উদ্দিনের লেখা বই পড়েন নি অথবা কারো ঘরে তাদের বই নেই।

কঠিন রুঢ় বাস্তবের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এক মহা উপন্যাসিক শরত চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আজকের এ ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থা বিশেষ করে ধর্মান্ধতা, জাত গোত্র বংশ বৈষম্যের হীন অন্ধত্ব বাঙ্গালী জাতিকে উগ্রবাদীর পথে ঠেলে দিয়েছে, সৃষ্টি করেছে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ যার ফলে কেউ সেয়েছে সমাজপতি কেউ হয়েছে এক ঘরে আবার কেউ বা হয়েছে দেশান্তরী।

বন্ধুরা চলো তাহলে আমরা শরত বাবুর ছোটগল্প বিলাসী নিয়ে বিশদ আলোচনা করি। যে সকল ছাত্র ছাত্রী বিলাসী গল্পটি এখনো পড়নি তারা একবার পড়ে দেখবে বার বার পড়তে ইচ্ছে হবে।

গল্পটির বিশেষ বিশেষ অংশগুলো তোমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেবো যাতে তোমরা পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তরগুলো সহজেই খুজে পাও এবং লিখতে পারো।

যে কোন একটি গল্পের ভিতরে কিছু বিশেষ সংলাপ বা দৃশ্য লেখকগণ হাইলাইট করে থাকেন এবং সে সকল বিশেষ কথাগুলো বা অংশগুলো থেকেই সাধারনত পরীক্ষার সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। সে বিশেষ অংশগুলো নিয়েও কথা বলবো।

এর মধ্যে কোথায় কোথায় সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যার অংশ হতে পারে তাও তোমাদের জানিয়ে দেবার চেস্টা করবো। 

বিলাসীহা বন্ধুরা যদি আমার এ সারাংশ প্রতিবেদনটি ভালো লাগে সাবস্ক্রাইব করবে লাইক করবে এবং কোথাও যদি আমার ভুল ব্যাখ্যা পরিলক্ষিত হয়, তাও জানিয়ে দেবে আমি সংশোধনের চেস্টা করবো।

বিলাসী

গল্পটিকে কেউ প্রেমের গল্পও মনে করতে পারে কিন্তু বস্তুতপক্ষে এটি কোন প্রেমের গল্প নয়।  
বিলাসী সে ১০০ বছর পূর্বের অনুন্নত বাংলার নিভৃত একটি পল্লীর অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবন প্রবাহের প্রতিচ্ছবি । যা আমরা শরৎ বাবুর ব্যক্তি জীবনের সাথে অনেকটা মিল রয়েছে। অর্থাৎ এ গল্পে স্বয়ং শরত বাবুকেও কোন একটি চরিত্রের মাঝে খুজে পাওয়া যায়।
কোন গল্পের কাহিনী কখনোই একান্ত বাস্তব ঘটনা নিয়ে লেখা হয়না, কিন্তু আসে পাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো থেকেই লেখকগণ সাজিয়ে গুছিয়ে লিখে থাকেন।

এ গল্পটি বলা হয়ে হয়েছে ন্যাড়া নামের এক যুবকের মূখে, তাতেই আমরা ধরে নিতে পারি এই ন্যাড়া হয়তো শরত বাবু নিজেই, এমনটি বিশ্লেষকগণ মনে করে থাকেন।

ন্যাড়া যে গ্রামটিতে বাস করতো সে গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে কিছু ছিলনা কারন ঐ গ্রামটিতে কোন স্কুল কলেজ ছিলনা, যা বাংলার আসল রুপ। আমরা যখন ছোট ছিলাম অর্থাৎ যদি ষাট দশকের কথাই বলি, তাহলে বলতেই হবে যে তখন আমরা দুই তিন মাইল দূরে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পায়ে হেটে গিয়ে ক্লাস করতাম। তাহলে বন্ধুরা ভাবো যে ১০০ বছর পূর্বে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবহেলিত গ্রামগুলোতে শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন ছিল।

দুই ক্রশ অর্থাৎ সাড়ে চার মাইলের মত পায়ে হেটে ন্যাড়া স্কুলে যেত। এমনিতেই গ্রামটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবহেলিত গ্রাম তার উপর ম্যালেরিয়া ডাইরিয়া জাতীয় রকমারী দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হবার কারনে গ্রামের মানুষের অশান্তির কোন শেষ ছিল না।

ন্যাড়া যে স্কুলটিতে পড়তো সে স্কুলে মৃত্যুঞ্জয় নামে একটি ছেলে ছিলো । মূলত এ ছোটগল্পের নায়কই হচ্ছে এই মৃত্যুঞ্জয়।

আদু ভাইয়ের গল্প তোমরা পড়েছ, যে নাকি একই ক্লাসে অর্থাৎ ক্লাস সেভেনে সুদীর্ঘ অনেক গুলো বছর লেখাপড়া করেছে।

বিলাসী গল্পের এই মৃত্যুঞ্জয় অনেকটাই আদু ভাইয়ের মত। সে একই ক্লাসে সুদীর্ঘ বছর যাবত লেখা পড়া করছে ।

ম্রত্যুঞ্জয়ের কোন আত্মীয় পরিজন ভাই বোন মা বাবা কেউ ছিলনা। এ ধরা ধামে সে একাই জীবন যাপন করতো। তার সম্পদের মধ্যে একটি বিশাল আমের বাগান ছিল যার আয় দিয়েই ম্রত্যুঞ্জয় চলতো। অন্যদিকে মৃত্যুঞ্জয়ের থেকে সবাই অর্থ ভোগ করতো তার সরলতার কারনে, তার বন্ধু সহপাঠী বা অন্যান্য ছেলেরাও এই মৃত্যুঞ্জয়ের নিকট থেকে অর্থ নিয়ে চলতো। আর এই টাকার লোভেই তারা মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে বন্ধুত্ব করে সঙ্গ দিতো। এমনি ওই সকল ছেলেদের বাবারাও সে সুযোগ হাত ছাড়া করেনি।

একদিন মৃত্যুঞ্জয় খুব অসুস্থ্য হয়ে পরে এবং তার চিকিৎসার জন্য ঐ গ্রামেরই এক সাপুড়ে কে ডেকে আনা হয়, ওই সাপুড়ের মেয়ে হচ্ছে বিলাসী অর্থাৎ এই গল্পের মূল নায়িকা। বিলাসী সেবা যত্ন করে মৃত্যুঞ্জয় কে সুস্থ্য করে তোলে এবং সে সেবা যত্নের সূত্র ধরেই মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর মধ্যে ভালোবাসার জন্ম নেয়। অতপর প্রেমে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয় অর্থাৎ মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে বিয়ে করে।

সাপুড়ের মেয়ে বিয়ে করবে সাপুড়ের ছেলেকে আর কায়স্তর ছেলে বিয়ে করবে কায়স্তর মেয়েকে এটাই সে আদি কালের ধর্মান্ধ একগুয়ে সমাজের নিয়ম। এ অনিয়মের বিরুদ্ধে অনেক রক্তক্ষয়ী দুর্ঘটনার কথাও জানা যায়।

বিয়ে পর্যন্ত কোন সমস্যা ছিলোনা, সমস্যা দাড়ালো গ্রামের জাত গোত্র বংশ নিয়ে বিবাহের পর। কারন বিলাসী হচ্ছে যাযাবর সাপুড়ের মেয়ে আর মৃত্যুঞ্জয় হচ্ছে কায়স্ত ঘরের সন্তান।

বিষয় হচ্ছে শিগ মাছ খেতে পারবে, শিং মাছের ঝোল খেতে পারবে না। অর্থাৎ এক জাত গোত্র বা বর্ণের ছেলে অন্য গোত্রের মেয়ের তরকারী চা বিস্কিট প্রসাদ খেতে পারবে কিন্তু ভাত খেতে পারবেনা, ব্যাপারটা এমনি এক হাস্যকর মনে হয় আজকাল আমাদের নিকট। যাকে ধর্মীয় রীতি নীতি বিশেষজ্ঞগণ একটি কুসংস্কারের অভিশাপ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।

যাইহোক, মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ের মেয়েকে বিবাহ করেছে সে কারনে উচু বংশের ছেলে মৃত্যুঞ্জয়কে গ্রামের মাতুব্বর মোড়ল নামের ধর্মান্ধ ব্যক্তিরা কিছু বলেনা, তারা আক্রমন করে নিরীহ নিরাপরাধী অসহায় অবলা সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীর উপর। তারা বিলাসীকে ধরে মারধরও করে নির্যাতনের এক পর্যায়ে ধরে নিয়ে গ্রাম থেকে দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আসে কিন্তু বিলাসী তার সিদ্ধান্ত, তার ভালোবাসার মানুষ মৃত্যুঞ্জয়কে ছাড়তে নারাজ এবং মৃত্যুঞ্জয়ও ভালোবাসা মূল্য দিতে গিয়ে বিলাসীকে নিয়ে এ অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

এবং চূড়ান্ত ভাবে বিলাসীর পরিবারের সাথে মিসে গিয়ে বংশীয় কায়স্তের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ে হয়ে যায়।

এবারে যে ন্যাড়াকে দিয়ে গল্পটি বলানো হয়েছে সে ন্যাড়াও সাপুড়ে হবার খায়েস মিটানোর সুযোগ পেলো, সেও মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর সাথে সাপুড়ের বেশ ধারন করে একাত্ব হয়ে যায় কিন্তু বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়  চাইছিলো না যে ন্যাড়াও বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে একই ভাবে সমাজ ত্যাগী সাপুড়ে হয়। যাইহোক ন্যাড়াকে নিয়ে ওরা তিনজন এক সাথেই সাপুড়ে হয়ে কাজ করতে থাকে।

একদিন হঠাত সাপের কামড়ে মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু ঘটে। বিলাসী এত কস্টে পাওয়া ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর কস্ট বিলাসী সহজভাবে মেনে নিতে না পারায়, বিলাসীও আত্মহত্যা করে।

এ ছিল গল্পের মোটামুটি একটি সারাংশ কিন্তু এখানেই শেষ কথা নয়। আরো অনেক কিছু তোমাদের জানতে হবে বন্ধুরা।

যেমন
১/ বিলাসী ছোটগল্পের সারাংশ তোমার নিজ ভাষায় ব্যক্ত করো
এক নং প্রশ্নের উত্তর উপরে এতক্ষন ব্যক্ত করলাম।
এবারে দ্বিতীয় সম্ভাব্য প্রশ্ন
দুই ক্রোশ পথ হাটিয়া তাহারা প্রতিদিন স্কুলে বিদ্যার্জনের করিতে যায়;

২/ দুই নম্বর প্রশ্ন হতে পারে-  দুই ক্রোশ বলতে কত মাইল দূরত্ব বুঝায় ? 
উত্তর হবেঃ
দুই ক্রোশ বলতে প্রায় সাড়ে চার মাইল দূরত্ব বোঝায় কারন এক ক্রোশ বলতে প্রায় দুই মাইলেরও বেশী পথ পায়ে হেটে ন্যাড়া ও অন্যান্য ছেলেরা স্কুলে যেতো;  এখন থেকে ১০০ বছর আগের অর্থাৎ ১৮০০ সালের একটি অজো পাড়া গায়ের কথা চিন্তা করেই তোমাদের উত্তর গুলো সাজাতে হবে।
৩ নং প্রশ্নের আগে আবারও একটু বলে নেয়া ভালো যে ন্যাড়ার ভাষায়ঃ আমাদের গ্রামের একটি ছেলের সঙ্গে মাঝে মাঝেই স্কুলের পথে দেখা হইতো। তার নাম ছিল মৃত্যুঞ্জয়। আমাদের চেয়ে সে বয়সে অনে বড় থারড ক্লাসে পড়িত। কবে সে প্রথম থারড ক্লাশে উঠিয়াছিল, এ খবর আমরা কেহই জানিতাম না;
এবার আসো বন্ধুরা এই থারড ক্লাস নিয়ে কথা বলি। সে আদিকালের ক্লাসের গণনা হতো উল্টো করে যেমন প্রথম শ্রেণী ছিলো দশম শ্রেণী, নবম শ্রেণী ছিলো দ্বিতীয় শ্রেণী এবং অস্টম শ্রেনী ছিলো  মৃত্যুঞ্জয়ের থার্ড ক্লাস। অর্থাৎ মৃত্যুঞ্জয় ক্লাস এইটে পড়তো। বিষয়টি অনেকেই অবগত নয় কাজেই এ বিষয়টিও পরীক্ষায় আসতে পারে বন্ধুরা। মনে রাখতে হবে ।
এমন প্রশ্নও আসতে পারে যে অস্টম শ্রেণী বলতে কোন ক্লাসকে বুঝিয়েছে?

মৃত্যুঞ্জয়ের এক চাচা ছিলো অর্থাৎ বাবার ছোট ভাই যাকে পশ্চিম বঙ্গের ভাষায় খুড়া। এই চাচা মৃত্যুঞ্জয় কে মোটেও সহ্য করতে পারতোনা উপরুন্ত সারাক্ষন মৃত্যুঞ্জয়ের নামে যত রকম মিথ্যাচার দুর্নাম রটনা করা। যেমন মৃত্যুঞ্জয় গাঁজা টানে, গুল টানে ইত্যাদি ধরনের নানাবিধ অগ্রহণযোগ্য কথা বার্তা বলে বেড়াতো। ঐ খুড়া আরো বলে বেড়াতো যে ওই আম বাগানের অর্ধেক অংশ তার নামে রয়েছে, সে অবিলম্ভে সালিশ নালিশ বসিয়ে দখল করার পায়তারা করছে।

আরো একটি বিষয় মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে যে সকল ছেলেরা চলাফেরা করতো তারা সব সময়েই মৃত্যুঞ্জয়ের থেকে মিথ্যে কথা বলে টাকা পয়সা নিতো এবং কেবল ঐ ছেলে গুলোই নয় ওদের বাবারাও অসুস্থ্যাতার  মিথ্যে কথা বলে, বই হারিয়ে গিয়েছে, স্কুলের মাইনে দিতে পারেনা ইত্যাদি রকমারী মিথ্যার আশ্রয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের থেকে টাকা হাতিয়ে নিতো। কিন্তু সমাজের কারো নিকট তা স্বীকার করতো না । আবার তাদের ছেলেরাই যে মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে চলা ফেরা করে এ কথাটিও গোপন রাখতো এবং মৃত্যুঞ্জয়কে চুষে খেতো।

এর পরে “ রাস্তা পর্যন্ত তোমায় রেখে আসবো কি? এবং পৌছে দিতে হবে না, শুধু আলোটা দাও” এবং ঘন জঙ্গলের পথ একটু দেখে দেখে পা ফেলে যেয়ো”

এ কথা গুলো কে কাকে কোথায় বলেছিল?

এ তিনটি প্রশ্নের যে কোনটি তোমাদের পরীক্ষায় আসতে পারে-

তাহলে চলো বন্ধুরা সে ব্যাখ্যায় যাই।

মৃত্যুঞ্জয় যখন খুবই অসুস্থ্য তখন বিলাসী কঠিন সময় পার করেছে। দিন রাত মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করে তাকে সুস্থ্য করে তুলেছিল।

একদিন রাতে ন্যাড়া মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিলো। ন্যাড়াকে এগিয়ে দিতে লন্ঠন নিয়ে বিলাসী এগিয়ে যায়।

 রাতের অন্ধকার বনে ঘুট ঘুটে গাঢ় অন্ধকারে তার দুজন। কেউ কথা বলছে না।

বিলাসী বললো রাস্তা পর্যন্ত তোমায় রেখে আসবো কি?

ন্যাড়া উত্তর দিল পৌছে দিতে হবে না, শুধু আলোটা দাও

বিলাসী আবার বললঃ ঘন জঙ্গলের পথ, একটু দেখে দেখে পা ফেলে যেও।

এবারে আর শুধু নিকা নয়, তা না হয় চুলায় যাক, তাহার হাতে ভাত পর্যন্ত খাইতেছে।

এ কথাটি কে কখন বলেছিলো?

বন্ধুরা চলো উত্তর খুজে বেড় করি।

মৃত্যুঞ্জয়ের সেই চাচা অর্থাৎ বাবার ছোট ভাই খুড়া মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর বিয়ের বিষয়টিকে একটি ইস্যু তৈরী করে গোটা গ্রামে ঘুরে ঘুরে বলে বেড়াচ্ছিল ।

গেল গেল সমাজ জাত ধর্ম বংশ গোত্র সব গেল।

অকাল কুসুমন্ডটা একতা সাপুড়ের মেয়ে বিকা করিয়া ঘরে আনিয়াছে। আর শুধু নিকা নয়, তাও না হয় চুলায় যাক, তাহার হাতে ভাত পর্যন্ত খাইতেছে। গ্রামে যদি ইহার শাসন না থেকে ত বনে গিয়া বাস করিলেই ৎ হয়।  

তোমরা সহজেই বুঝতে পেরেছ যে সে ১০০ বছর আগের সমাজ আর আজকের সমাজের কত পার্থক্য বা ব্যবধান। মৃত্যুঞ্জয় কেবল বিয়েই করেনি বিলাসীর হাতের রান্না করা ভাতও খেয়েছে। এই যে ধর্মীয় কুসংস্কার, এ কু সংস্কারের বিরুদ্ধে শরত চন্দ্র বাবুর লেখনিতে একটি প্রতিবাদের ছায়া স্পস্টত পরিলক্ষিত হয়।

যখন মৃত্যুঞ্জয় অসুস্থ্য হয়ে মারা যাচ্ছিলো তখন কেউ ফিরে তাকায়নি খবরও নেয়নি। অথচ একটি অসুস্থ্য মৃত্যু পথযাত্রী রোগির সেবা করতে যেয়ে বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের মাঝে প্রনয়ের উদয় হয় এবং এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করে।

এক দিন গ্রামবাসী মিলে মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ীতে আক্রমন ক্করে।   

 ১০/১২ জন লোক লাঠি সোটা নিয়ে বিলাসীর উপর হামলা করে। নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে একটি অসহায় মেয়েকে পশুর মত মারধর করতে শুরু করলো।

এ বিষয়ে লেখক তার প্রতিবাদের ভাষায় ব্যঙ্গ করেই বলছেন যে অন্য দেশে নাকি দুর্বল বলে মেয়েদের উপর হাত তুলতে হয়না, কিন্তু আমাদের দেশে কুসংস্কারে আক্রান্ত বলে আমরা মানিনা। দুর্বলের উপর স্ববলের অত্যাচার এ কথাটিই লেখক তীব্র প্রতিবাদের ভাষায় কটাক্ষ করে লিখেছেন।  

আর একটি লক্ষণীয় বিষয় বিলাসীর ভালোবাসার নিদর্শন বা মানবিক মূল্যবোধের একটি উদাহরণ আমরা দেখতে পাই। যখন বিলাসীকে এতগুলো মানুষ শারীরিক নির্যাতন করছিলো, এবং একজন চুলে ধরে একজনে কানে ধরে একজনে হাতে ধরে মারধরের পাশাপাশি টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন বিলাসী নিজের কথার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ঐ অসুস্থ্য মৃত্যুঞ্জয়ের রুটি কাবারের বিষয়টি। এত প্রহার নির্যাতনের পরেও বিলাসী বললো “ বাবুরা আমাকে একটিবার ছেড়ে দাও, আমি রুটিগুলো ঘরে দিয়ে আসি। বাইরে শিয়াল কুকুরে খেয়ে যাবে রোগা মানুষ সমস্ত রাত খে পাবেনা”

বন্ধুরা এখানে লেখকের আরো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ বিলাসী গল্পে উল্লেখ করে আমাদের ঘুনে ধরা সমাজকে স্বরন করিয়ে দেয় যে আমাদের সমাজ কোন দিন হত দরিদ্র্য জন গোষ্ঠীর নির্যাতন হলে অন্যায় হলে কখনোই ঐ গরীব অসহায় মানুষগুলোর পক্ষে কথা বলিনা। আমরা তেলে মাথায় তেল দেই। অর্থাৎ যারা সমাজপতি ধ্বনি অথচ অত্যাচারী, তারা শত অন্যায় অপরাধ করলেও প্রতিবাদ করিনা, বরং সমর্থন করে থাকি এবং নির্যাতিত দরিদ্র্যকুলের মানুষগুলোকে কখনো ধনির অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচানোর প্রয়োজনে পক্ষ নিয়ে কথা বলিনা।

গল্পের আরো একটি বিষয় খুব লক্ষণীয় যে ন্যাড়া অর্থাৎ আমরা যদি ধরে নেই যে শরৎ বাবু নিজেও কিছু সময়ের জন্য সন্নাসী সেজেছিলেন এবং সন্নাসীদের চাল চলন খাওয়া দাওয়ার পরিবেশ বেশ ভূষা এবং বিশেষ করে সন্নাসী হলে মশার কামড় খেতে হয় ইত্যাদি কারনেই ন্যাড়া সন্নাসী ব্রত ত্যাগ করে ফিরে এসেছিল। এখানে শরত বাবুর জীবনের বাস্তব ঘটনা প্রবাহের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

তো বলছিলাম ন্যারার কথা। ন্যাড়া সন্নাসীর বেশ ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে দেখলো যে মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে নিয়ে সাপুড়ে হয়ে গিয়েছে। ন্যাড়ারও অনেক দিনের সাধ ছিলো সেও সাপুড়ে হবে, যাদু মন্ত্র বান টোনা শিখবে এবং সাপ ধরার কৌশল রপ্ত করবে। মূলত সাপ ধরার কোন মন্ত্র নেই এটি একটি কুসংস্কার তবে সাপ ধরের কিছু কৌশল অবশ্যই রয়েছে। ন্যাড়া মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর সাথে সাপুড়ে সেজে কাজ করার ইচ্ছে ব্যক্ত করলো কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসী রাজী হলোনা।

মৃত্যুঞ্জয়ের চেয়ে সাপুড়েদের বান টোনা বা যাদু মন্ত্রী ইত্যাদি যে সবই মিথ্যেচার বা কুসংস্কার এ কথা বিলাসী ভালো করেই জানতো।
অন্য দিকে সাপুড়ের দল সাপের কামড়ের থেকে বাচার জন্য তাবিজ বিক্রয় করতো, যেটি আরো বড় ধরনের প্রতারণা বা জালিয়াতি জোচ্চুরি বিধায় বিলাসী এগুলো না করার জন্য অনেক কেই বিষেধ করেছে। বিলাসী বলতো দেখো  এখানে আমরা বিলাসীর সততা ন্যায় পরায়নতা সে কথাটিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিলাসী মৃত্যুঞ্জয় কে প্রায়ই বলতো দেখো এমন করিয়া মানুষ ঠকাইও না।
বিলাসীর এই মানুষ ঠকিও না, বাক্যটি নিয়েও পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতে পারে যে কথাটি কে কখন কোন পরিস্থিতে কাকে বলেছে?
তো বন্ধুরা এই ছিলো বিলাসী ছোট গল্পের সার সংক্ষেপ এবং পরীক্ষায় আসন্ন প্রশ্নাদি ও ব্যাখ্যার বিশেষ বিশেষ অংশগুলো।

তোমরা ভালো করে আর ক্ষতিয়ে পৃষ্ঠা অনুযায়ী পড়বে এবং নিজে বুঝে নিতে চেস্টা করবে। মনে রাখবে মূখস্থ বিদ্যার চেয়ে নিজে বুঝে নিয়ে নিজের ভাষায় ব্যক্ত করলে পরীক্ষায় অধিক নং পাবার সম্ভাবনা অনেক বেশী।

ভালো লাগলে সাবস্কাইব করবে শেয়ার করবে এবং লাইক করবে।

ধন্যবাদ সবাইকে। সকলের সার্বিক সুস্থ্যতা মঙ্গল কামনা করি

তোমাদের স্কলের উত্তোরোত্তর বিদ্যা ও জ্ঞানের পরিধি প্রস্ফুটিত হোক। 

মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮

অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ও ভাতা প্রসঙ্গে ? মোকতেল হোসেন মুক্তি

অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ও ভাতা প্রসঙ্গে ? 

মোকতেল হোসেন মুক্তি
Moktel Hossain Mukthi·

“সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি”-


former secretary Nazrul Islam khan N I Khan নামেই বেশী পরিচিত। সাবেক এই সচিব মহান মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় ৪ নেতাদের নিয়ে অনেক গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখা লিখেছেন। 

মনে প্রাণেই মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির একজন তুখোড় লেখক সমালোচক এবং গবেষক । তিনি উচ্চ শিক্ষিত বিধায় তাঁকে নিয়ে কোন খারাপ মন্তব্য করা সমীচীন নয়। কিন্তু একটি বিষয় আমার বোধগম্য হচ্ছে না যে তিনি কেন হঠাত করে মূর্খ গরীব অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের একান্ত প্রাপ্য জাতীয় মর্যাদা ও সন্মানাদি প্রসঙ্গে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান এবং বিরুপ কঠোর সমালোচনামূলক বিতর্কের সৃষ্টি করলেন? একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও আমার সন্তান আমি বিদেশে নিজের কষ্টার্জিত অর্থেই লেখা পড়া করিয়েছি। নিজে যা'পারিনি তা' সন্তানদের পুরন করার এই যে মহান প্রত্যয় ও প্রত্যাশা তা' বাস্তবায়ন করা অতি হত দরিদ্র্য নিভৃত পল্লীর অখ্যাত অজ্ঞাত অশিক্ষিত একজন বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আদৌ সম্ভব নয়। 

ক) মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার কমান্ডার মুক্তিযুদ্ধকালীন আমার কমান্ডার New Zealand প্রবাসী Hanif Mahmud নিজেও উচ্চ শিক্ষিত এবং তাঁর সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। 
খ) মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী সেক্টর কমান্ডারগণ/ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক/ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর আলী/নৌ পরিবহন মন্ত্রী মোঃ শাহজাহান খানসহ আরো অগনিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা অথবা তাদের সন্তানেরা কি অশিক্ষিত? অন্যান্য বিত্তশালী উচ্চ শিক্ষিত বর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী/শিল্পী/সাহিত্যিকগীতিকার/সুরকার/সচিব/কবি/লেখক/ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ারদের কথা না হয় উল্লেখ নাই করলাম। যাদের আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে তাদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে এই বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার কোটা প্রয়োজন নেই। তাই তাঁরা এ সব নিয়ে কখনো মাথায় ঘামাননি বা বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কোন মিডিয়া বা পত্র/পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়নি। 

আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা এই হত দরিদ্র্য অজো পাড়া গায়ে অবহেলা অবজ্ঞা দীনহীন মানবেতর জীবন যাপন করা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়নের লক্ষ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা/কোটা ইত্যাদিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যথা গ্যাস বিল পানি বিল বিদ্যুৎ বিল সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্স-আয়কর কিছুটা কমিয়ে সহজতর করার চেষ্টা করেছেন। যদিও এরই মধ্যে বিগত জামাত বি এন পি সরকারের অশুভ কর্ম পরিধি মুক্তিযোদ্ধার তালিকাকে কলুষিত ও কলঙ্কিত করেছে। তালিকায় নাম এসেছে ৪ বছরের দুধের শিশুর। বিধায় আসল মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেরই নাম আজো তালিকাভুক্ত হয়নি। যে সমস্যা নিয়ে আমরা অনেকেই হা হুতাশ এবং বর্তমান সরকারের মন্ত্রী নেতা ও কমান্ডারদের কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছি। অন্যদিকে অমুক্তিযোদ্ধা হাতিয়ে নিচ্ছে শেখ হাসিনার দেয়া সকল সুযোগ সুবিধাদি। "সকলের জন্য ধান, সকলের জন্য চাল, সকলের জন্য পানি, সকলের জন্য ভূমি, শিক্ষা, সকলের জন্য অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, সকলের জন্য আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সুসমবন্টন, সকলের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের ফসল, সকলের জন্য একটি সুখি সাচ্ছন্দ জীবন ব্যবস্থার জন্যই জাতিরজনকের আজীবন সংগ্রাম এই মহান "স্বাধীনতা"। সাড়ে সাত কোটি থেকে আজ আমরা ১৬ কোটি ৩৫ লক্ষে পৌছে গিয়েও সমাধান করা সম্ভব হয়নি হতভাগা মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যা। 

 এর মূল কারন ১৯৭৫ সালে জাতিরজনক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা এবং পাকিস্তান আই এস আই'র পা'চাটা কুকুর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠার ফলে হারিয়ে গিয়েছে আসল মুক্তিযোদ্ধারা এবং দেশপ্রেমিক সোনার মানুষগুলো। "৭৫ পরবর্তী এমনও পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে যে ভয়ে অনেকেই স্বীকার করেনি যে আমি মুক্তিযোদ্ধা" বা আওয়ামী লীগ সমর্থনকারী । কি ভয়াবহ ছিল বাঙ্গালী জাতির ২১টি বছর! ভাবতে গেলে গা'শিউরে ওঠে! লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে স্বাধীনতা বিরোধী আল বদর আল শামস আল-রাজাকারের কোন সন্তান অশিক্ষিত নয় এবং দারিদ্র্যসীমার নীচে জীবন প্রবাহ অতিবাহিত করে না। ভাগ্নে সজীব ওয়াজেদ জয় 

"একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ' 

এর একটি সেমিনারে উল্লেখ করেছিলেন " মহান স্বাধীনতায় বাঙ্গালী জাতি বিজয় অর্জন করলেও স্বাধীনতার সুফল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির ঘরে পৌছায় নি" কথাগুলো একটি ছোট মানুষের হলেও বিশাল এবং ব্যাপক অর্থে মহা দর্শনের চেয়েও অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ ছিল সজীব ওয়াজেদ জয়ের সে বক্তব্য। অতি সম্প্রতি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জনৈক মুনতাসীর মামুন স্যার এবং শাহরিয়ার কবীর (যিনি জীবনে তাঁর কোন লেখায় বঙ্গবন্ধুকে জাতিরজনক বলে স্বীকার করেন নি বা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন লেখা প্রবন্ধ গল্প কাহিনী কখনো লিখেন নি কিন্তু তিনি রাজাকারের ফাসি চেয়েছেন) এই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন এবং পরবর্তীতে নেত্রীর পরোক্ষ ধমক অর্থাৎ সান্টিং খেয়েই দালাল নির্মূল কমিটির দালালগণ থেমে গিয়েছিলেন। মুনতাসীর মামুন সাহেব আবার আওয়ামী লীগ সরকারের পয়সায় ইতোমধ্যে পবিত্র হজ্বব্রতটিও বীনা পয়সায় সেরে নিয়েছেন। যাক সে কথা লিখছিলাম। একটি বিষয় আমি ৭১ থেকে এ পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষ করে এসেছি এবং হিসাব মিলিয়েও দেখেছি যে সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান স্যারের কথার মধ্যে কিছুটা সত্যতা খুজে পেলেও এই ভাতা ও কোটার বিরুদ্ধে তাঁর মত বিচক্ষন ব্যক্তি জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্ব উচ্চ ডিগ্রিধারী একজন পণ্ডিত ব্যক্তির বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি সমর্থকের কলামে/ভাষায়/লেখায়/বলায়/ তর্কে /বিতর্কে বিরোধীতা কেমন যেনো বেমানান এবং অশালীনতার মতই গা'জ্বালাময় বক্তব্য। আমি তাঁকে চিনি এবং জানি। তিনি মনে প্রাণেই জাতিরজনকের একান্ত ভক্ত অনুসারী । 

কিন্তু এই হতভাগা দীনহীন অশিক্ষিত হত দরিদ্র্য অজো পাড়া গায়ের সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের "অশিক্ষিত বা মূর্খ" শব্দটি ব্যবহার করে সর্বনাশ করে দিলেন! আমি হতবাক নজরুল স্যার! আপনার মত ব্যক্তির মূখে মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীরের মত বস্তাপচা সস্তা হাত তালির প্রত্যাশায় এহেন বক্তব্য নিদারুণ বেদনাদায়ক এবং অসহনীয়। আমার গ্রামে আব্দুর রহিম সরদার নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা। যার সন্তান এস এস সি পরীক্ষা দেবার ফি না দিতে পারার কারনে ঘরে বসে কাদতে ছিলেন। তারপরে যেভাবেই হোক অন্য কেউ ব্যবস্থা করেছিল। 

আজ যদি এই হত দরিদ্র্য আব্দুর রহিম সরদারের অর্থ থাকত তাহলে ইউনুক গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর আলি স্যারের মতই এই রহিমের ছেলেও আমেরিকান ইন্টারন্যাসনাল স্কুলে ইংলিশ মিডিয়ামে নিউ ইয়র্কে লেখা পড়া করত এবং মাসের ঐ ১০ হাজার টাকা ভিক্ষা এবং ছেলেকে ভর্তি ফি না দিতে পারার যন্ত্রণায় কাতরাতে হতনা। কাজেই এই হত দরিদ্র্য রহিমের ছেলে যেভাবেই হোক পাস করে একটি চাকুরী নিতে যাবে। ১০০ মার্কের মধ্যে যদি সে ৮০ থেকে ৯০ ও প্রাপ্ত হয় তার চাকুরী হবে না। কেন জানেন? কারন একটি সরকারী চাকুরী নিতে গোটা দেশে এখন হাইব্রীড কাউয়া ফার্মের মূরগীর দালালদের নিকট প্রথমে দৌড়াতে হবে। তারপরে চুক্তি হবে দালালের সাথে। কত লাখ দিতে পারবেন? না না তা' হবে না, কারন মন্ত্রী সাহেবকেই দিতে হবে ৫ লাখ। তারপরে ওমক নেতাকে দিতে হবে এবং এর মধ্য থেকেই আমার % রাখতে হবে। এখন আসুন আসল কথায় আমার গ্রাম দক্ষিন আকাল বরিশ ঐ যে হতভাগা বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম সরদারের ছেলে গল্প বলছিলাম-সে আব্দুর রহিম সরদার ওর বাপ দাদা ১৪ গুষ্ঠির সকল ঘর বাড়ী সহায় সম্বল কম্বল বিক্রয় করলেও ২ লাখ টাকার বেশী যোগার করতে পারবে না। আমার আত্মীয় আমার সহপাঠী, সহযোদ্ধা বন্ধু, আমি তার একান্তজন হিসেবে সবই জানি। সে আমারই এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছিল। তাহলে নজরুল স্যার আপনি যে বললেন সকল % কেটে মাত্র ৫% কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সীমিত রাখতে, বাকীটা কি ঐ সকল আল বদর আল শামস আল রাজাকারের সন্তানের জন্য রাখতে বলছেন? নাকি আপনার ছেলে মেয়ে অথবা মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীরের ছেলে মেয়েদের জন্য রাখতে বলছেন? 

তবে স্যার একটা কথা জেনে রাখবেন-মনে রাখবেন " জাতিরজনকের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ও ২৬শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণায় উল্লেখ করা উচিত ছিল যে অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করতে পারবে না - শুধু আপনাদের মত মহা জ্ঞানপাপী পন্ডিত বর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী সুদখোড় ইউনুসের মত ধনকুবের লুটেরা, রাজাকার মুসা বীন শমসেরের (লুনা মুসার) মত গোটা বাংলাদেশের খেতে খামারে ব্রিটিশ সরকারের গাঁরা ম্যাকনেট চুরি করে বিক্রয়কারী) মুনতাসীর মামুনের মত দালাল এবং শাহরিয়ার কবীরের মত সুবিধাভোগি চাটুকর তোষামোদকারীরাই মুক্তিযুদ্ধ করতে পারবে। যেহেতু বঙ্গবন্ধু কৃষক শ্রমিক জেলে তাতী কামার কুমার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কবি শিল্পী সাহিত্যিক লেখক নৌকার মাঝি ইঞ্জিনের ড্রাইভার অথবা রিকশা/ভ্যানগাড়ী চালক/বাসের ড্রাইভার/হেল্পার/ঠিকাদার কারো কথাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্পষ্ট উল্লেখ করেননি। সেহেতু আপনাদের এহেন অবান্তর অহেতুক কোটার বিরোধী তথা হত দরিদ্র্য দীনহীন মজদুর অজো পাড়া গায়ের নিভৃত পলীতে রাত দিন আপনাদের মূখের অন্ন ফলানোর কাজে ব্যস্ত বয়োবৃদ্ধ অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধের "অশিক্ষিত" বলে সম্বোধন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের মহা নায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতিরজনকের বিদেহী আত্মাকে কষ্ট দেবার চেষ্টা থেকে বিরত হোন। আপনি ভালো থাকুন। সুন্দর থাকুন। আমরাত অশিক্ষিতই; সে দোষ ত আমাদের না স্যার? সে দোষ পশ্চিমা শোষক হায়েনা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ লিয়াকত আলী খান আইউব খান টিক্কা খান, মোনায়েম খানদের। “সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি।”- 

কবির এ মর্মবেদনা অনেক পুরোনো।সেদিনের কবির চেতনায় আগুন ধরেছিল বঙ্গ সন্তানদের চেহারা দেখে। তাই বড় আফসোস করে কবি তার বেদনা দগ্ধ চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন কাব্যিক ছন্দে।কিন্তু আজ অনেক চড়াই উৎরাই ঘাত প্রতিঘাত আর উস্থান-পতনের মাধ্যমে স্বাধীনতার এতো বছর পরেও বাঙ্গালীর জাতির পিতা নিয়ে আমরা নষ্ট খেলা,ইতিহাস নিয়ে টানাটানি এবং অপবাদ নিয়ে মেতে আছি। আমরা আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে, সংশয় এবং মানা না মানার মধ্যে দিয়ে যে নষ্ট খেলায় মেতে আছি তা শুধু আমাদের জন্য অপমান জনক না বরং তা আমাদের বিশ্বের মানচিত্রে অতি নগ্ন হিসাবেই পরিচিত লাভ করাতে দ্বিগুন সাহায্য করে। ঠিক তেমনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নে এবং ভাতা ও কোটা নিয়েও আপনারা আজ জাতিরজনক নেই বলেই টানা হেচড়া করে সন্মানের বদলে অসন্মান করছেন। তাহলে আমাদের ঢাকা ষ্টেডিয়ামে ডেকে কেন বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে অস্ত্র জমাদানের প্রাক্কালে জীবন প্রদ্বীপ নিভিয়ে দিলেন না?