বিলাসী
শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটগল্পের সারাংশ ও বিশদ আলোচনা
শিক্ষার্থী বন্ধুরা
যাদের আসন্ন
পরীক্ষায় বিলাসী ছোটগল্পটি সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তরের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাদের
জন্য আমার এ সার সংক্ষেপ।
অনেক ছাত্র
ছাত্রী রয়েছে যারা গল্প পাঠ করে সারাংশ লেখার ক্ষেত্রে হিমশিম খায় অথবা মনে রাখতে পারেনা।
তারা যদি অডিও শোনে অনেক ক্ষেত্রে কারো মূখে শোনা গল্পের সারাংশ মোটামুটিভাবে আপনা
আপনিতেই তৈরী হয়ে যায়।
আবার কেউ কেউ
আছে যারা বইয়ের সারাংশ মূখস্ত করে। তবে নিজের স্বরণ শক্তি একটু দুর্বল হলে অনেকেই মূখস্ত
করার অভ্যেস করে থাকে, যাতে পরীক্ষায় অধিক নং পাবার সম্ভাবনা একান্তই কম থাকে। সে কারনে
দেখা গিয়েছে মূখস্ত বিদ্যার চেয়ে কোন গল্প নিজে পাঠ করে গল্পের গোটা বিষয়টি সম্পর্কে
সম্মক ধারনা পোষণ করে নিজের থেকে সারাংশ লিখলে পরীক্ষায় অধিক নং পাওয়া যায়।
চলো বন্ধুরা
আজ আমি তোমাদের যুগ শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী শরত চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিলাসী ছোটগল্পের
সারাংশ এবং মর্ম সংক্ষেপে আলোচনা করবো।
যে কোন সময়ের
সব চেয়ে জনপ্রিয় কথাশিল্পী বা উপন্যাসিকদের মধ্যে শরত বাবু এমন একজন লেখক ছিলেন যিনি
জীবনের রুঢ় কঠিন বাস্তব সত্যকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন এবং বাংলার অবহেলিত লাঞ্ছিত
বঞ্ছিত পল্লী সমাজের হত দরিদ্র্য মানুষগুলোর জীবনে প্রতিনিয়ত যে সকল প্রতিবন্ধকতা,
সমস্যা ও অভিশপ্ত জীবন প্রবাহের স্রোতে সুখ সমৃদ্ধি মহা সাগরের অথৈ জলে ভেসে যাওয়া
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় রয়েছে, সে সকল অজো পাড়াগায়ের নিভৃত পল্লীর মানুষের জীবনের ছোট
খাটো বা বৃহৎ কস্টের কথাগুলো তার লেখায় গল্পে উপন্যাসে প্রবন্ধে প্রকাশ করেছেন।
বাংলার অপরাজেয়
কথা সাহিত্যিক শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটগল্প বিলাসী সে ধরনেরই একটি হৃদয় বিদারক
কাহিনী বা ছোটগল্প।
যখন আমি ক্লাস
ফাইভ কিংবা সিক্সে পড়তাম। আমার শিক্ষক আমার এক চাচাতো ভাই শরত বাবুর উপন্যাস পড়তেন
আর আমাদের নিকট উদাহরণ স্বরুপ একটি একটি গল্পের মধ্য থেকে বিশেষ অংশ গুলো শুনিয়ে উপদেশ
দিতেন।
কেবল আমার সে
শিক্ষকই নয়, এপার বাংলা ওপার বাংলার এমন কোন শিক্ষিত পরিবার নেই যে পরিবারের কেউ শরত
চন্দ্র, কবি গুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবি জসীম উদ্দিনের
লেখা বই পড়েন নি অথবা কারো ঘরে তাদের বই নেই।
কঠিন রুঢ় বাস্তবের
সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এক মহা উপন্যাসিক শরত চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আজকের এ ঘুনে
ধরা সমাজ ব্যবস্থা বিশেষ করে ধর্মান্ধতা, জাত গোত্র বংশ বৈষম্যের হীন অন্ধত্ব বাঙ্গালী
জাতিকে উগ্রবাদীর পথে ঠেলে দিয়েছে, সৃষ্টি করেছে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ যার ফলে কেউ
সেয়েছে সমাজপতি কেউ হয়েছে এক ঘরে আবার কেউ বা হয়েছে দেশান্তরী।
বন্ধুরা চলো
তাহলে আমরা শরত বাবুর ছোটগল্প বিলাসী নিয়ে বিশদ আলোচনা করি। যে সকল ছাত্র ছাত্রী বিলাসী
গল্পটি এখনো পড়নি তারা একবার পড়ে দেখবে বার বার পড়তে ইচ্ছে হবে।
গল্পটির বিশেষ
বিশেষ অংশগুলো তোমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেবো যাতে তোমরা পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তরগুলো
সহজেই খুজে পাও এবং লিখতে পারো।
যে কোন একটি
গল্পের ভিতরে কিছু বিশেষ সংলাপ বা দৃশ্য লেখকগণ হাইলাইট করে থাকেন এবং সে সকল বিশেষ
কথাগুলো বা অংশগুলো থেকেই সাধারনত পরীক্ষার সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। সে
বিশেষ অংশগুলো নিয়েও কথা বলবো।
এর মধ্যে কোথায়
কোথায় সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যার অংশ হতে পারে তাও তোমাদের জানিয়ে দেবার চেস্টা করবো।

বিলাসী
গল্পটিকে কেউ
প্রেমের গল্পও মনে করতে পারে কিন্তু বস্তুতপক্ষে এটি কোন প্রেমের গল্প নয়।
বিলাসী সে ১০০
বছর পূর্বের অনুন্নত বাংলার নিভৃত একটি পল্লীর অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবন প্রবাহের
প্রতিচ্ছবি । যা আমরা শরৎ বাবুর ব্যক্তি জীবনের সাথে অনেকটা মিল রয়েছে। অর্থাৎ এ গল্পে
স্বয়ং শরত বাবুকেও কোন একটি চরিত্রের মাঝে খুজে পাওয়া যায়।
কোন গল্পের
কাহিনী কখনোই একান্ত বাস্তব ঘটনা নিয়ে লেখা হয়না, কিন্তু আসে পাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো
থেকেই লেখকগণ সাজিয়ে গুছিয়ে লিখে থাকেন।
এ গল্পটি বলা
হয়ে হয়েছে ন্যাড়া নামের এক যুবকের মূখে, তাতেই আমরা ধরে নিতে পারি এই ন্যাড়া হয়তো শরত
বাবু নিজেই, এমনটি বিশ্লেষকগণ মনে করে থাকেন।
ন্যাড়া যে গ্রামটিতে
বাস করতো সে গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে কিছু ছিলনা কারন ঐ গ্রামটিতে কোন স্কুল কলেজ
ছিলনা, যা বাংলার আসল রুপ। আমরা যখন ছোট ছিলাম অর্থাৎ যদি ষাট দশকের কথাই বলি, তাহলে
বলতেই হবে যে তখন আমরা দুই তিন মাইল দূরে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পায়ে হেটে গিয়ে
ক্লাস করতাম। তাহলে বন্ধুরা ভাবো যে ১০০ বছর পূর্বে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবহেলিত গ্রামগুলোতে
শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন ছিল।
দুই ক্রশ অর্থাৎ
সাড়ে চার মাইলের মত পায়ে হেটে ন্যাড়া স্কুলে যেত। এমনিতেই গ্রামটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের
অবহেলিত গ্রাম তার উপর ম্যালেরিয়া ডাইরিয়া জাতীয় রকমারী দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত
হবার কারনে গ্রামের মানুষের অশান্তির কোন শেষ ছিল না।
ন্যাড়া যে স্কুলটিতে
পড়তো সে স্কুলে মৃত্যুঞ্জয় নামে একটি ছেলে ছিলো । মূলত এ ছোটগল্পের নায়কই হচ্ছে এই
মৃত্যুঞ্জয়।
আদু ভাইয়ের
গল্প তোমরা পড়েছ, যে নাকি একই ক্লাসে অর্থাৎ ক্লাস সেভেনে সুদীর্ঘ অনেক গুলো বছর লেখাপড়া
করেছে।
বিলাসী গল্পের
এই মৃত্যুঞ্জয় অনেকটাই আদু ভাইয়ের মত। সে একই ক্লাসে সুদীর্ঘ বছর যাবত লেখা পড়া করছে
।
ম্রত্যুঞ্জয়ের
কোন আত্মীয় পরিজন ভাই বোন মা বাবা কেউ ছিলনা। এ ধরা ধামে সে একাই জীবন যাপন করতো। তার
সম্পদের মধ্যে একটি বিশাল আমের বাগান ছিল যার আয় দিয়েই ম্রত্যুঞ্জয় চলতো। অন্যদিকে
মৃত্যুঞ্জয়ের থেকে সবাই অর্থ ভোগ করতো তার সরলতার কারনে, তার বন্ধু সহপাঠী বা অন্যান্য
ছেলেরাও এই মৃত্যুঞ্জয়ের নিকট থেকে অর্থ নিয়ে চলতো। আর এই টাকার লোভেই তারা মৃত্যুঞ্জয়ের
সাথে বন্ধুত্ব করে সঙ্গ দিতো। এমনি ওই সকল ছেলেদের বাবারাও সে সুযোগ হাত ছাড়া করেনি।
একদিন মৃত্যুঞ্জয় খুব অসুস্থ্য হয়ে পরে এবং তার চিকিৎসার জন্য ঐ গ্রামেরই এক সাপুড়ে কে ডেকে আনা হয়, ওই সাপুড়ের মেয়ে হচ্ছে বিলাসী অর্থাৎ এই গল্পের মূল নায়িকা। বিলাসী সেবা যত্ন করে মৃত্যুঞ্জয় কে সুস্থ্য করে তোলে এবং সে সেবা যত্নের সূত্র ধরেই মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর মধ্যে ভালোবাসার জন্ম নেয়। অতপর প্রেমে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয় অর্থাৎ মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে বিয়ে করে।
সাপুড়ের মেয়ে বিয়ে করবে সাপুড়ের ছেলেকে আর কায়স্তর ছেলে বিয়ে করবে কায়স্তর মেয়েকে এটাই সে আদি কালের ধর্মান্ধ একগুয়ে সমাজের নিয়ম। এ অনিয়মের বিরুদ্ধে অনেক রক্তক্ষয়ী দুর্ঘটনার কথাও জানা যায়।
বিয়ে পর্যন্ত
কোন সমস্যা ছিলোনা, সমস্যা দাড়ালো গ্রামের জাত গোত্র বংশ নিয়ে বিবাহের পর। কারন বিলাসী
হচ্ছে যাযাবর সাপুড়ের মেয়ে আর মৃত্যুঞ্জয় হচ্ছে কায়স্ত ঘরের সন্তান।
বিষয় হচ্ছে
শিগ মাছ খেতে পারবে, শিং মাছের ঝোল খেতে পারবে না। অর্থাৎ এক জাত গোত্র বা বর্ণের ছেলে
অন্য গোত্রের মেয়ের তরকারী চা বিস্কিট প্রসাদ খেতে পারবে কিন্তু ভাত খেতে পারবেনা,
ব্যাপারটা এমনি এক হাস্যকর মনে হয় আজকাল আমাদের নিকট। যাকে ধর্মীয় রীতি নীতি বিশেষজ্ঞগণ
একটি কুসংস্কারের অভিশাপ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।
যাইহোক, মৃত্যুঞ্জয়
সাপুড়ের মেয়েকে বিবাহ করেছে সে কারনে উচু বংশের ছেলে মৃত্যুঞ্জয়কে গ্রামের মাতুব্বর
মোড়ল নামের ধর্মান্ধ ব্যক্তিরা কিছু বলেনা, তারা আক্রমন করে নিরীহ নিরাপরাধী অসহায়
অবলা সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীর উপর। তারা বিলাসীকে ধরে মারধরও করে নির্যাতনের এক পর্যায়ে
ধরে নিয়ে গ্রাম থেকে দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আসে কিন্তু বিলাসী তার সিদ্ধান্ত, তার ভালোবাসার
মানুষ মৃত্যুঞ্জয়কে ছাড়তে নারাজ এবং মৃত্যুঞ্জয়ও ভালোবাসা মূল্য দিতে গিয়ে বিলাসীকে
নিয়ে এ অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
এবং চূড়ান্ত
ভাবে বিলাসীর পরিবারের সাথে মিসে গিয়ে বংশীয় কায়স্তের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ে হয়ে যায়।
এবারে যে ন্যাড়াকে
দিয়ে গল্পটি বলানো হয়েছে সে ন্যাড়াও সাপুড়ে হবার খায়েস মিটানোর সুযোগ পেলো, সেও মৃত্যুঞ্জয়
ও বিলাসীর সাথে সাপুড়ের বেশ ধারন করে একাত্ব হয়ে যায় কিন্তু বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয় চাইছিলো না যে ন্যাড়াও বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে
একই ভাবে সমাজ ত্যাগী সাপুড়ে হয়। যাইহোক ন্যাড়াকে নিয়ে ওরা তিনজন এক সাথেই সাপুড়ে হয়ে
কাজ করতে থাকে।
একদিন হঠাত
সাপের কামড়ে মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু ঘটে। বিলাসী এত কস্টে পাওয়া ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর
কস্ট বিলাসী সহজভাবে মেনে নিতে না পারায়, বিলাসীও আত্মহত্যা করে।
এ ছিল গল্পের
মোটামুটি একটি সারাংশ কিন্তু এখানেই শেষ কথা নয়। আরো অনেক কিছু তোমাদের জানতে হবে বন্ধুরা।
যেমন
১/ বিলাসী ছোটগল্পের
সারাংশ তোমার নিজ ভাষায় ব্যক্ত করো
এক নং প্রশ্নের
উত্তর উপরে এতক্ষন ব্যক্ত করলাম।
এবারে দ্বিতীয়
সম্ভাব্য প্রশ্ন
দুই ক্রোশ পথ
হাটিয়া তাহারা প্রতিদিন স্কুলে বিদ্যার্জনের করিতে যায়;
২/ দুই নম্বর
প্রশ্ন হতে পারে- দুই ক্রোশ বলতে কত মাইল দূরত্ব
বুঝায় ?
উত্তর হবেঃ
দুই ক্রোশ বলতে
প্রায় সাড়ে চার মাইল দূরত্ব বোঝায় কারন এক ক্রোশ বলতে প্রায় দুই মাইলেরও বেশী পথ পায়ে
হেটে ন্যাড়া ও অন্যান্য ছেলেরা স্কুলে যেতো;
এখন থেকে ১০০ বছর আগের অর্থাৎ ১৮০০ সালের একটি অজো পাড়া গায়ের কথা চিন্তা করেই
তোমাদের উত্তর গুলো সাজাতে হবে।
৩ নং প্রশ্নের
আগে আবারও একটু বলে নেয়া ভালো যে ন্যাড়ার ভাষায়ঃ আমাদের গ্রামের একটি ছেলের সঙ্গে মাঝে
মাঝেই স্কুলের পথে দেখা হইতো। তার নাম ছিল মৃত্যুঞ্জয়। আমাদের চেয়ে সে বয়সে অনে বড়
থারড ক্লাসে পড়িত। কবে সে প্রথম থারড ক্লাশে উঠিয়াছিল, এ খবর আমরা কেহই জানিতাম না;
এবার আসো বন্ধুরা
এই থারড ক্লাস নিয়ে কথা বলি। সে আদিকালের ক্লাসের গণনা হতো উল্টো করে যেমন প্রথম শ্রেণী
ছিলো দশম শ্রেণী, নবম শ্রেণী ছিলো দ্বিতীয় শ্রেণী এবং অস্টম শ্রেনী ছিলো মৃত্যুঞ্জয়ের থার্ড ক্লাস। অর্থাৎ মৃত্যুঞ্জয় ক্লাস
এইটে পড়তো। বিষয়টি অনেকেই অবগত নয় কাজেই এ বিষয়টিও পরীক্ষায় আসতে পারে বন্ধুরা। মনে
রাখতে হবে ।
এমন প্রশ্নও
আসতে পারে যে অস্টম শ্রেণী বলতে কোন ক্লাসকে বুঝিয়েছে?
মৃত্যুঞ্জয়ের
এক চাচা ছিলো অর্থাৎ বাবার ছোট ভাই যাকে পশ্চিম বঙ্গের ভাষায় খুড়া। এই চাচা মৃত্যুঞ্জয়
কে মোটেও সহ্য করতে পারতোনা উপরুন্ত সারাক্ষন মৃত্যুঞ্জয়ের নামে যত রকম মিথ্যাচার দুর্নাম
রটনা করা। যেমন মৃত্যুঞ্জয় গাঁজা টানে, গুল টানে ইত্যাদি ধরনের নানাবিধ অগ্রহণযোগ্য
কথা বার্তা বলে বেড়াতো। ঐ খুড়া আরো বলে বেড়াতো যে ওই আম বাগানের অর্ধেক অংশ তার নামে
রয়েছে, সে অবিলম্ভে সালিশ নালিশ বসিয়ে দখল করার পায়তারা করছে।
আরো একটি বিষয়
মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে যে সকল ছেলেরা চলাফেরা করতো তারা সব সময়েই মৃত্যুঞ্জয়ের থেকে মিথ্যে
কথা বলে টাকা পয়সা নিতো এবং কেবল ঐ ছেলে গুলোই নয় ওদের বাবারাও অসুস্থ্যাতার মিথ্যে কথা বলে, বই হারিয়ে গিয়েছে, স্কুলের মাইনে
দিতে পারেনা ইত্যাদি রকমারী মিথ্যার আশ্রয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের থেকে টাকা হাতিয়ে নিতো। কিন্তু
সমাজের কারো নিকট তা স্বীকার করতো না । আবার তাদের ছেলেরাই যে মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে চলা
ফেরা করে এ কথাটিও গোপন রাখতো এবং মৃত্যুঞ্জয়কে চুষে খেতো।
এর পরে “ রাস্তা
পর্যন্ত তোমায় রেখে আসবো কি? এবং পৌছে দিতে হবে না, শুধু আলোটা দাও” এবং ঘন জঙ্গলের
পথ একটু দেখে দেখে পা ফেলে যেয়ো”
এ কথা গুলো
কে কাকে কোথায় বলেছিল?
এ তিনটি প্রশ্নের
যে কোনটি তোমাদের পরীক্ষায় আসতে পারে-
তাহলে চলো বন্ধুরা
সে ব্যাখ্যায় যাই।
মৃত্যুঞ্জয়
যখন খুবই অসুস্থ্য তখন বিলাসী কঠিন সময় পার করেছে। দিন রাত মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করে তাকে
সুস্থ্য করে তুলেছিল।
একদিন রাতে
ন্যাড়া মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিলো। ন্যাড়াকে এগিয়ে দিতে লন্ঠন নিয়ে বিলাসী এগিয়ে
যায়।
রাতের অন্ধকার বনে ঘুট ঘুটে গাঢ় অন্ধকারে তার দুজন।
কেউ কথা বলছে না।
বিলাসী বললো
রাস্তা পর্যন্ত তোমায় রেখে আসবো কি?
ন্যাড়া উত্তর
দিল পৌছে দিতে হবে না, শুধু আলোটা দাও
বিলাসী আবার
বললঃ ঘন জঙ্গলের পথ, একটু দেখে দেখে পা ফেলে যেও।
এবারে আর শুধু
নিকা নয়, তা না হয় চুলায় যাক, তাহার হাতে ভাত পর্যন্ত খাইতেছে।
এ কথাটি কে
কখন বলেছিলো?
বন্ধুরা চলো
উত্তর খুজে বেড় করি।
মৃত্যুঞ্জয়ের
সেই চাচা অর্থাৎ বাবার ছোট ভাই খুড়া মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর বিয়ের বিষয়টিকে একটি ইস্যু
তৈরী করে গোটা গ্রামে ঘুরে ঘুরে বলে বেড়াচ্ছিল ।
গেল গেল সমাজ
জাত ধর্ম বংশ গোত্র সব গেল।
অকাল কুসুমন্ডটা
একতা সাপুড়ের মেয়ে বিকা করিয়া ঘরে আনিয়াছে। আর শুধু নিকা নয়, তাও না হয় চুলায় যাক,
তাহার হাতে ভাত পর্যন্ত খাইতেছে। গ্রামে যদি ইহার শাসন না থেকে ত বনে গিয়া বাস করিলেই
ৎ হয়।
তোমরা সহজেই
বুঝতে পেরেছ যে সে ১০০ বছর আগের সমাজ আর আজকের সমাজের কত পার্থক্য বা ব্যবধান। মৃত্যুঞ্জয়
কেবল বিয়েই করেনি বিলাসীর হাতের রান্না করা ভাতও খেয়েছে। এই যে ধর্মীয় কুসংস্কার, এ
কু সংস্কারের বিরুদ্ধে শরত চন্দ্র বাবুর লেখনিতে একটি প্রতিবাদের ছায়া স্পস্টত পরিলক্ষিত
হয়।
যখন মৃত্যুঞ্জয়
অসুস্থ্য হয়ে মারা যাচ্ছিলো তখন কেউ ফিরে তাকায়নি খবরও নেয়নি। অথচ একটি অসুস্থ্য মৃত্যু
পথযাত্রী রোগির সেবা করতে যেয়ে বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের মাঝে প্রনয়ের উদয় হয় এবং এক পর্যায়ে
তারা বিয়ে করে।
এক দিন গ্রামবাসী
মিলে মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ীতে আক্রমন ক্করে।
১০/১২ জন লোক লাঠি সোটা নিয়ে বিলাসীর উপর হামলা করে।
নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে একটি অসহায় মেয়েকে পশুর মত মারধর করতে শুরু করলো।
এ বিষয়ে লেখক তার প্রতিবাদের ভাষায় ব্যঙ্গ করেই বলছেন যে অন্য দেশে নাকি দুর্বল বলে মেয়েদের উপর হাত তুলতে হয়না, কিন্তু আমাদের দেশে কুসংস্কারে আক্রান্ত বলে আমরা মানিনা। দুর্বলের উপর স্ববলের অত্যাচার এ কথাটিই লেখক তীব্র প্রতিবাদের ভাষায় কটাক্ষ করে লিখেছেন।
আর একটি লক্ষণীয় বিষয় বিলাসীর ভালোবাসার নিদর্শন
বা মানবিক মূল্যবোধের একটি উদাহরণ আমরা দেখতে পাই। যখন বিলাসীকে এতগুলো মানুষ শারীরিক
নির্যাতন করছিলো, এবং একজন চুলে ধরে একজনে কানে ধরে একজনে হাতে ধরে মারধরের পাশাপাশি
টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন বিলাসী নিজের কথার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ঐ অসুস্থ্য মৃত্যুঞ্জয়ের
রুটি কাবারের বিষয়টি। এত প্রহার নির্যাতনের পরেও বিলাসী বললো “ বাবুরা আমাকে একটিবার
ছেড়ে দাও, আমি রুটিগুলো ঘরে দিয়ে আসি। বাইরে শিয়াল কুকুরে খেয়ে যাবে রোগা মানুষ সমস্ত
রাত খে পাবেনা”
বন্ধুরা এখানে
লেখকের আরো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ বিলাসী গল্পে উল্লেখ করে আমাদের ঘুনে ধরা
সমাজকে স্বরন করিয়ে দেয় যে আমাদের সমাজ কোন দিন হত দরিদ্র্য জন গোষ্ঠীর নির্যাতন হলে
অন্যায় হলে কখনোই ঐ গরীব অসহায় মানুষগুলোর পক্ষে কথা বলিনা। আমরা তেলে মাথায় তেল দেই।
অর্থাৎ যারা সমাজপতি ধ্বনি অথচ অত্যাচারী, তারা শত অন্যায় অপরাধ করলেও প্রতিবাদ করিনা,
বরং সমর্থন করে থাকি এবং নির্যাতিত দরিদ্র্যকুলের মানুষগুলোকে কখনো ধনির অত্যাচারের
হাত থেকে বাঁচানোর প্রয়োজনে পক্ষ নিয়ে কথা বলিনা।
গল্পের আরো
একটি বিষয় খুব লক্ষণীয় যে ন্যাড়া অর্থাৎ আমরা যদি ধরে নেই যে শরৎ বাবু নিজেও কিছু সময়ের
জন্য সন্নাসী সেজেছিলেন এবং সন্নাসীদের চাল চলন খাওয়া দাওয়ার পরিবেশ বেশ ভূষা এবং বিশেষ
করে সন্নাসী হলে মশার কামড় খেতে হয় ইত্যাদি কারনেই ন্যাড়া সন্নাসী ব্রত ত্যাগ করে ফিরে
এসেছিল। এখানে শরত বাবুর জীবনের বাস্তব ঘটনা প্রবাহের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
তো বলছিলাম
ন্যারার কথা। ন্যাড়া সন্নাসীর বেশ ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে দেখলো যে মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে
নিয়ে সাপুড়ে হয়ে গিয়েছে। ন্যাড়ারও অনেক দিনের সাধ ছিলো সেও সাপুড়ে হবে, যাদু মন্ত্র
বান টোনা শিখবে এবং সাপ ধরার কৌশল রপ্ত করবে। মূলত সাপ ধরার কোন মন্ত্র নেই এটি একটি
কুসংস্কার তবে সাপ ধরের কিছু কৌশল অবশ্যই রয়েছে। ন্যাড়া মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর সাথে
সাপুড়ে সেজে কাজ করার ইচ্ছে ব্যক্ত করলো কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসী রাজী হলোনা।
মৃত্যুঞ্জয়ের
চেয়ে সাপুড়েদের বান টোনা বা যাদু মন্ত্রী ইত্যাদি যে সবই মিথ্যেচার বা কুসংস্কার এ
কথা বিলাসী ভালো করেই জানতো।
অন্য দিকে সাপুড়ের
দল সাপের কামড়ের থেকে বাচার জন্য তাবিজ বিক্রয় করতো, যেটি আরো বড় ধরনের প্রতারণা বা
জালিয়াতি জোচ্চুরি বিধায় বিলাসী এগুলো না করার জন্য অনেক কেই বিষেধ করেছে। বিলাসী বলতো
দেখো এখানে আমরা বিলাসীর সততা ন্যায় পরায়নতা
সে কথাটিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিলাসী মৃত্যুঞ্জয় কে প্রায়ই বলতো দেখো এমন করিয়া
মানুষ ঠকাইও না।
বিলাসীর এই
মানুষ ঠকিও না, বাক্যটি নিয়েও পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতে পারে যে কথাটি কে কখন কোন পরিস্থিতে
কাকে বলেছে?
তো বন্ধুরা
এই ছিলো বিলাসী ছোট গল্পের সার সংক্ষেপ এবং পরীক্ষায় আসন্ন প্রশ্নাদি ও ব্যাখ্যার বিশেষ
বিশেষ অংশগুলো।
তোমরা ভালো
করে আর ক্ষতিয়ে পৃষ্ঠা অনুযায়ী পড়বে এবং নিজে বুঝে নিতে চেস্টা করবে। মনে রাখবে মূখস্থ
বিদ্যার চেয়ে নিজে বুঝে নিয়ে নিজের ভাষায় ব্যক্ত করলে পরীক্ষায় অধিক নং পাবার সম্ভাবনা
অনেক বেশী।
ভালো লাগলে
সাবস্কাইব করবে শেয়ার করবে এবং লাইক করবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
সকলের সার্বিক সুস্থ্যতা মঙ্গল কামনা করি
তোমাদের স্কলের উত্তোরোত্তর বিদ্যা ও জ্ঞানের পরিধি প্রস্ফুটিত হোক।