Pages

রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২

রেইনকোট অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

 

বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম

আশা করি ভালো আছ।
আজ আমি মহান মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা রেইনকোট গল্পটি নিয়ে বিষদ আলোচনা করবো।  


মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙ্গালীর ভূমিকা। সে ভূমিকা সম্পর্কে কিছু লিখতে গেলে, কোন উদাহরণ বা বর্ণনা দিতে গেলে আমারও গা শিউরে ওঠে। কারন আমিও যখন ১৫ বছর বয়সের যুবক ছিলাম। ঠিক এ রেইনকোট গল্পটির অনেক প্লট অনেক লোমহর্ষক কথা ও দৃশ্য আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে সে ৫১ বছর পূর্বে সৃতির জগতে।

আমি সরাসরি ভারতে যেয়ে প্রশিক্ষণ নেয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং এর চেয়ে বাস্তব চোখে দেখা ঘটনা আর কি হতে পারে।

তাই আমার ইচ্ছে হলো রেইন কোট গল্পটি নিয়ে আলোচনা করার।

হয়তো তোমাদের মনে হতে পারে এটি যেহেতু কোন প্রেম ভালোবাসা বা পারিবারিক ঘটনাদি নিয়ে লেখা নয়, সেহেতু গল্পটি শুনতে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করবে না। কিন্তু ঘটনাটি যদি একবার মন দিয়ে শোন বা রেইনকোট গল্পটি একবার নিজে পাঠ করো, ক্রমাগত ভাবে আরো পড়বার আগ্রহ বেড়ে যাবে।

গল্পটি যিনি লিখেছেন তিনি নিজে একজন পরোক্ষ মুক্তিযোদ্ধাই উল্লেখ করতে চাই। কারন যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা অন্যদিকে যারা ওই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছে যেমন রান্না করে খাইয়েছে, জীবনের ঝুকি নিয়ে নৌকা দিয়ে নদী পার করেছে আবার কেউ কেউ গোপনে পাক বাহিনীর তথ্য যাতায়াত ও গতিবিধির গোপন সংবাদ এনে দিয়েছেন, তারাও আমার দৃষ্টিতে প্রত্যেকেই এক একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সন্মান পাবার দাবীদার।

লেখকের গল্পে ব্যবহৃত ভাষা ও বর্ণনা একটু বিধঘুটে মনে হতে পারে অনেকের নিকটই, কোন কোন স্থানে লেখক একান্ত নিজের ভাষা বা প্রচলিত আঞ্চলিক ভাষার সাহায্যে বর্ণনা করেছেন।

গল্পের প্রধান চরিত্রে দেখা যায় নুরুল হুদা নামের এক যুবক। যিনি অত্যন্ত ভিতু প্রকৃতির মানুষ হওয়া সত্বেও পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে দেশ মাতৃকার টানে মুক্তিযোদ্ধা সাজবার লক্ষ্যে সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে।

ল্পটি লেখা হয়েছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় আজকের রাজধানী ঢাকার জনজীবনে নেমে আসা দুর্যোগের থম থমে মহা আতংকের প্রেক্ষাপটে।

ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে গেরিলা অর্থাৎ মুক্তিবাহিনী পাক বাহিনীর ক্যাম্পগুলোতে গোপনে ছোট খাটো আক্রমন চালাতে শুরু করেছে ; ছোট খাটো এ কারনে বললাম যে বড় ধরনের হামলা করতে যে ধরনের অস্ত্র সরঞ্জামের প্রয়োজন, তা’আমাদের ছিল না।

যেমন বন্ধুরা আমি ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু অস্ত্র ছিলো মাত্র কাঠের তৈরী একটি রাশিয়ান থ্রি নট থ্রি রাইফেল, যা পাক বাহিনীর কামান স্টেন গান মেশিন গানের নিকট অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও খেলনাসম অস্ত্র।

ঠিক সে মুহূর্তেরই বর্ষা মূখর একটি দিনের গল্প যে গল্পটির নায়ক নুরুল হুদা কে উল্লেখ করা হয়েছে।  নুরুল হুদা এই বৃষ্টিতে আরাম করেই শুয়েছিলো। এই তো তার ঘুমানো বা অবসর সময় কাটানোর একটি আনন্দঘন মুহূর্ত ।

আজ তিন দিন যাবত বৃষ্টি হচ্ছে তাই আর বন্দুক কামানের ঠাস ঠুস ফুট ফাট শব্দ শোনা যাবেনা। বন্ধুক বারুদেরও বিশ্রাম দরকার।

হঠাত খট খট কড়া নাড়ার শব্দে নুরুল হুদার স্বপ্ন ও আরাম আয়েশে গুড়ে বালি পড়লো। সেখানে লিখেছে ম্যান প্রোপোজেজ –গড ডিসপোজেজ অর্থাৎ মানুষ কত কিছুই প্রত্যাশা করে কিন্তু সে প্রত্যাশা পুরনের বিষয়টি একমাত্র বিধাতার হাতেই ন্যাস্ত।

নুরুল হুদা ভাবলো এই বুঝি পাক বাহিনী হামলা করেছে। এবং নুরুল হুতা যেহেতু ভীতু প্রকৃতির মানুষ তাই সে ভয়ে পবিত্র সুরাহ কেরাত পাঠ করতে শুরু করে। লা ইলাহা ইল্লাহ আন্তা ছোবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালিমিন। যে দোয়াটি আমরা বিপদ গ্রস্থ হয়ে পাঠ করে থাকি।

এ ছাড়াও নুরুল হুদা বলছে যে এই কয়েক দিনে অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ শুরু থেকে অদ্যাবধি সে কত সুরাই না মূখস্ত করেছে। এবং বন্ধুরা আমরাও যখন গোপালগঞ্জ ভাটিয়াপাড়া মিলিটারী ক্যাম্পের পাশ দিয়ে ভারত যাচ্ছিলাম, সে সময়ে আমরাও যে যা জানতাম সে দোয়াই পাঠ করতাম এবং আল্লাহ্‌ কে স্বরন করতাম।

আতংক গ্রস্থ ভীত সন্ত্রস্ত নুরুল হুদা দরজা খুলে দেয় আর দোয়া পাঠ করতে থাকে কিন্তু না কোন মিলিটারী নয়, এসেছে কলেজের অধ্যক্ষ সাহেবের পিওন। পিয়ন বলল স্যার নে আপকো সালাম দিয়া তলব কিয়া আইভি আপকো যানা হোগা”

খোচা খোচা দাড়ি সম্পন্ন লোকটি ভাঙ্গা ভাঙ্গা উর্দুতে বলতে বলছে “ মিসকিরিয়ান লোগ ইলেকটিরি টেরান্সফারমার তোড় দিয়া আওর ওয়াপস যানেকা তাইম পিরিন্সিপাল সাহাবকা কোঠিমে গেরেনেড ফেকা গেট তোড় গিয়া”

অর্থাৎ দুষ্কৃতিকারীরা ইলেক্ট্রিক ট্রান্সফরমার ভেঙ্গে দিয়েছে এবং যাবার সময় অধ্যক্ষ সাহেবের বাসায় গ্রেনেড হামলা করে দরজা ভেঙ্গে দিয়েছে।

বন্ধুরা এখানে একটি বিষয় প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের জানা একান্ত অপরিহার্য বলে আমি মনে করি। এই মিস্ক্রিয়েন্ট অর্থাৎ দুষ্কৃতিকারী কারা?

খন মুক্তিযুদ্ধ চলছে তখন পাক বাহিনী এবং পাকিস্তান সরকার বিশ্বের নিকট মুক্তিযুদ্ধ চলছে এ কথাটিকেই স্বীকার করেনি; ওরা বিশ্বে প্রচার করেছে যে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী পাকিস্তানকে খন্ড বিখন্ড করার লক্ষ্যে ভারতের উস্কানী ও গোলা বারুদের সাহায্যে অশান্তি সৃষ্টি করছে। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই এখানে মিস্ক্রিয়েন্ট বা দুষ্কৃতিকারী বলা হয়েছে।

এবং সে সময়ে পাকিস্তান রেডিওতেও দুষ্কৃতিকারী বলেই সংবাদে প্রচার করা হত।

তাই পিয়ন এসে সংবাদ জানিয়ে গেলো যে তাকে এখনই কলেজে যেতে হবে।

এখানে বন্ধুরা তোমরা সহজেই বুঝে নিয়েছ যে কলেজের প্রিন্সিপালের বাসায় মুক্তি বাহিনী গ্রেনেড হামলা করেছে, কলেজের গেট ভেঙ্গে দিয়েছে এবং তাঁরই পাশে পাক বাহিনীর ক্যাম্পও রয়েছে।

কলেজের প্রিন্সিপাল মূলত আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কে সমর্থন করেন নি বরং তিনি পাক বাহিনীকে বিভিন্ন পরামর্শ ও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে । তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে যে সব স্কুল কলেজ থেকে শহীদ মিনার তুলে দাও। কারন এটা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রতীক। এবং উর্দু ভাষাকে পাকিস্তানের রাস্ট্রীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রধান বাধা ছিলো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন । দ্বিতীয়তঃ এই ভাষা আন্দোলনে বাংগালীরা জয়ী হবার কারনেই আজ তাদের মনোবল দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে, সে সূত্র ধরেই তারা পাকিস্তানকে দ্বিখন্ডিত করার কাজেও সফলকাম হবে। সে কারনেই প্রিন্সিপালের উপদেশ অনুযায়ী দেশের সকল শহীদ মিনারগুলো পাক বাহিনী ভেঙ্গে দিতে শুরু করে।

 নুরুল হুদাকে বাইরে যেতে হবে অথচ প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাই নুরুল হুদার স্ত্রী তার ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর একটি রেইনকোট নুরুল হুদাকে দেয়।

এই নুরুল হুদা মুক্তিযোদ্ধা ছিল না, বরং এই যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের ভিতরে ইতোমধ্যে নুরুল হুদা ৪ বার বাড়ী বদল করেছে, কারন সে ছিল অত্যন্ত ভিতু প্রকৃতির মানুষ। সূতরাং তাঁরই শ্যালক মুক্তিযোদ্ধা, এ কথা যদি পাক বাহিনী রাজাকার বা অন্যান্য লোকজন জেনে যায় তাহলে তার অবস্থা কি ঘটবে, সে ভয় ও আতংকের কারনেই নুরুল হুদা বার বার বাড়ি বদল করে এক এলাকা থেকে আর এক এলাকায় গিয়ে বসত করেছে।

নুরুল হুদার শ্যালক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বর্ডার ক্রস করে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের ভিতরে প্রবেশ করে পাক বাহিনীর শিবিরে আঘাত করে আর অন্যদিকে পাক মিলিটারী প্রতিদিন শহর বন্দর গ্রাম হাট বাজার মহল্যায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে, নীরিহ নিরস্ত্র মানুষগুলোকে হত্যা করছে। যুবতী মেয়েদের নিয়ে ইজ্জত লুন্ঠণ করছে, এ সব বিষয় নিয়ে নুরুল হুদা কোথাও কারো সাথে টু শব্দটি করেনা বা কারো আলোচনায় যোগ দেয়না।  

তাই নুরুল হুদার মনে শংকা এই ভেবে যে আমি তো কোন কিছুর সাথেই জড়িত নয়, তাহলে কেন আমাকে ডাকা হচ্ছে? এ সব নানাবিধ কথাগুলো মনে করেই চিন্তায় বিভোর নুরুল হুদা রেইন কোটটি পরিধান করে রওয়ানা দেয়/

বাসে উঠার পরেই নুরুল হুদা এক অদ্ভুত পরিস্থিতির শিকার হয়। তার গায়ে রেইন কোট দেখে বাসের অন্যান্য যাত্রীগণ তার দিকে আড় চোখে, কেউবা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কেমন যেনো এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে সবাই দেখতে থাকে। বাসের মানুষগুলো ভাবছে এ বুঝি কোন মুক্তিযোদ্ধা। ভয়ে অনেকেই বাস থেকে দ্রুত নেমে যায়, ফলে নুরুল হুদার মনে করছে এরা বুঝি কোন চোর বা পকেট মার হতে পারে, তাই আমার গায়ে রেইনকোট দেখে ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

নুরুল হুদার মনে এক নতুন সাহসিক অনুভূতি জাগতে থাকে অর্থাৎ নুরুল হুদা বুঝতে পারে যে তার রেইনকোট অনেক শক্তিশালী রহস্যময় ক্ষমতার অধিকারী।

ভীতু নুরুল হুদা নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার রেইঙ্কোটের ক্ষমতার বলে নিজেকেও মুক্তিযোদ্ধার মত সাহসী ভাবতে শুরু করে এবং মনের দিক থেকেও বীরত্বের এক মহান উপলব্ধি তাকে সাহসী পুরুষে পরিনত করতে থাকে।

মাঝ পথে হঠাত এক দল পাক বাহিনী বাসটিকে থামিয়ে চেক করার লক্ষ্যে বাসে ওঠে এবং নুরুল হুদাকে দেখে মিলিটারীও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পরে এবং অনেকটা ভয়ে বাস থেকে মিলিটারী নেমে যায় অর্থাৎ সে আগের ভীতু নুরুল হুদার চাহনী মনোবল ও সাহসের বহিঃপ্রকাশ এমনি ছিল যে মিলিটারী ভেবেছে যে সে কোন মুক্তিযোদ্ধা হবে, তাই মিলিটারী বিলম্ভ না করে দ্রুত বাস থেকে নেমে যায়।

এখানে বন্ধুরা আমরা অতি সহজেই এ গল্পের সফল নামকরণ রেইন কোট এর সার মর্ম বুঝতে পারি। যে নুরুল হুদা বাসার দরজা নক করাতেই ভীট সন্ত্রস্ত হয়ে কাপতে থাকে, সে নুরুল হুদা শ্যালক মুক্তিযোদ্ধার রেইন কোট পরিধান করাতে নিজের ভিতরে ঘুমন্ত এক সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা তাকে জাগিয়ে তোলে এবং মন মানসিকতার এক অদ্ভুত পরিবর্তন এনে দেয়। আর সে পরিবর্তনের কারনেই একজন মিলিটারী তার চাহনী দেখেই ভয়ে বাস থেকে নেমে পড়ে।

সে কারনেই এ গল্পের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে রেইন কোট, যে রেইনকোট একজন ভীতু মানুষকে মনে প্রাণে গর্বিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাবতে শিখায়।

নুরুল হুদা কলেজে যাবার পরে দেখে যে একজন মিলিটারী তার জন্য অপেক্ষা করছে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা বাদ করার জন্য। এবং এক পর্যায়ে নুরুল হুদাকে চোখ বেধে ধরে নিয়ে একটি অন্ধকার ঘরে বেধে রাখা হয় এবং পর পর অনেকগুলো প্রশ্ন করা হয়।

কলেজে লোহার আলমারী আনা হয়, সে আলমারী বহন করে এনেছিল যে কুলিরা, তারা ধরা পড়েছে এবং ওরা নাকি দুষ্কৃতিকারী অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা এবং মিলিটারী নাকি দেখেছে যে তারা নুরুল হুদার সাথে কথা বলেছে।

নুরুল হুদা আলমারীর রঙ দেরাজ কয়টি এবং তালা চাবি সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলেছে, এর বেশী সে কিছু জানেনা ।

পাক বাহিনী বলে যে মিস্ক্রিয়েন্টরা ধরা পড়েছে এবং তারা নুরুল হুদার নাম উল্লেখ করেছে। ঐ সকল দুষ্কৃতিদের সাথে নুরুল হুদার যোগাযোগ নাকি নিয়মিত।

এ তথ্য ভীতু নুরুল হুদা শুনবার সাথে সাথে প্রচন্ডভাবে ভয় পাবার কথা কিন্তু নুরুল হুদার এটিটিউট সম্পূর্ণ অন্য রুপে প্রকাশ পেলো।

অত্যন্ত আনন্দিত উল্লসিত হয়ে নুরুল হুদা বলল আমার নাম বলেছে, আমার নাম? অর্থাৎ বন্ধুরা গল্পের শুরুতে যে ভীতু নুরুল হুদার কথা আমরা জানি, যে নাকি মুক্তিযুদ্ধ, পাক বাহিনীর জ্বালাও পোড়াও হত্যা ইত্যাদি থেকে শত হাত দূরে নীরবে থেকেছে, সে নুরুল হুদা যখন মিলিটারীর মূখে শুনলো যে ওই সকল ধরা পড়া দুষ্কৃতিকারীরা তার নাম বলেছে, তার সাথে নিয়মিত কথা বার্তা বা যোগাযোগ রয়েছে, এমন তথ্য দিয়েছে, শুনে ভীতু পুরুষ নুরুল হুদা যেনো সত্যিকারেই গর্বিত বীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকায় অবতীরন হলো। এবং পাক বাহিনী ন্রুল হুদার উপর অমানসিক নির্যাতন চালালো সঠিক তথ্য আদায়ের জন্য। কিন্তু দেখো, ন্রুল হুদা আমরা হলে হয়তো নিজের জীবন বাঁচানোর তাগিদে কান্নাকাটি করতাম, ক্ষমা চাইতাম বা অস্বীকার করতাম যে আমি কিছুই জানিনা কিন্তু নুরুল হুদার ক্ষেত্রে ঘটলো সম্পূর্ণ উল্টো একটি ঘটনা।

নুরুল হুদা অত্যন্ত গর্ববোধ করেই জানালো, সে সব জানে এবং ওদের আস্তানাও চেনে এবং তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগও রয়েছে।  

এরপরে নুরুল হুদার উপর চলল অনেক নির্যাতন এমন কি চাবুক মারা হতো নিয়মিত কিন্তু নুরুল হুদা ওই চাবুকের আঘাতের চেয়ে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ আছে বা মুক্তিযোদ্ধাদের মতই সেও একজন, এই গৌরবই তার সকল অত্যাচার ও চাবুকের আঘাত অতি তুচ্ছ বলে মনে হলো।

অতএব বন্ধুরা তোমরা অতি সহজেই বুঝে নিয়েছ যে রেইন কোট নাম করণের সার্থকতা কোথায় কেন এবং কি কারনে।

একজন ভীতু পুরুষ নুরুল হুদাকে গল্পের শুরুতে আমরা যা’জেনেছি সে ন্রুল হুদাকে বদলে দিয়েছে অত্যন্ত সাহসী বীর হিসেবে মানসিকভাবে পরিবর্তন এনে দিয়েছে ঐ  স্ত্রীর ভাই মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট।  

মূলত রেইনকোট একটি প্রতীক যা’ একজন ভীতু আত্মকেন্দ্রীক মানুষকে বদলে দিয়েছে। ধীরে ধীরে এভাবেই সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত হয়েছে এবং অনেক যুবক যুবতী প্রথম দিকে না হলেও অন্যজন কে দেখে বা এমনই কোন কঠিন বাস্তবতা তাদের মুক্তিযুদ্ধে যেতে সাহস যুগিয়েছে।

নুরুল হুদা জানে যে সে যদি স্বীকার করে যে দুষ্কৃতিকারীদের সে চিনে বা জানে, তাহলে পাক বাহিনী তাকে ছেড়ে দেবেনা এমন কি গুলি করে মেরেও ফেলতে পারে। কিন্তু সে নিজের বাচা মরার কথা চিন্তা না করেই বলে ফেলেছে ওদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগও রয়েছে। তার অর্থ এটাই অনুভূত হয় যে ভীতু নুরুল হুদা দেশ মাতৃকার টানে নিজের জীবন কে অতি তুচ্ছ ভেবে নিজেকে মনে মনে একজন বীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ভাবতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছে।

এই ছিল অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস স্যারের রেইনকোট গল্পের সারাংশ বা সার সংক্ষেপ